১৯ বছর আগে এখান থেকেই শুরু করেছিলেন পেশাদার জীবন। উজ্জ্বল ফুটবল জীবনের ইতিও টানলেন সেই যুবভারতীতেই। তবে বিদায়টা খুব যে সুখকর হল, সেটা নয়। দলকে বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে তুলে বিদায়ী ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হল না। সেই জন্যই বোধহয় খেলা শেষ হতেই চুপ করে কিছুক্ষণ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলেন বিদায়ী নেতা। তারপর হাতজোড় করে গোটা স্টেডিয়াম ঘুরে ভক্তদের বিদায় জানালেন। সুনীলের সঙ্গে কাঁদল গ্যালারি। মাঠ প্রদক্ষিণের পর গার্ড অফ অনার-এর আগে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন। গ্যালারিতেও তখন আবেগের বিস্ফোরণ। কান্নায় ভেঙে পড়েন সুনীলের বাবা, মা এবং স্ত্রী। শেষবারের মতো ভারতের জার্সি গায়ে প্রবেশ করলেন ড্রেসিংরুমে। ম্যাচ সবে শেষ হয়েছে। যুবভারতীর টানেলের সিঁড়িতে বসে পড়লেন। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন সুনীল। চারপাশ দিয়ে লোকজন চলে যাচ্ছে, কিন্তু কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর। কিছুক্ষণ নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর পর আবার ফিরলেন মাঠে। গায়ে ভারতের পতাকা জড়ানো। শুরু সংবর্ধনার পালা। যুবভারতীতে ম্যাচ শেষে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে সুনীলকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানান ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রীর ডিজাইন করা পিসি চন্দ্র জুয়েলার্স থেকে বানানো ১৯টি সোনার কয়েন দিয়ে তৈরি সোনার হার, স্যুট, শাড়ি ও ১৯টি গোলাপ তুলে দেওয়া হয় সুনীলের হাতে। ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী। আন্তর্জাতিক ফুটবলে রোনাল্ডো,মেসির পরে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। দীর্ঘ ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ভারতকে উপহার দিয়েছেন বহু স্মরণীয় জয়। সুনীল ছেত্রীর ফুটবলের প্রতি ভালবাসা, শৃঙ্খলা, দায়বদ্ধতা আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাংলা তথা সারা ভারত সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে গর্বিত। বাংলার বুক থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন তিনি। তাঁর আগামী জীবনের জন্য রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।” যুবভারতীতে ম্যাচ শেষে ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে সুনীলকে বিদায়ী ম্যাচের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, আমি তোমাকে প্রথম প্রস্তাব দিলাম বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সুনীল বাংলার ফুটবলের উন্নতিতে এগিয়ে আসুন, চান মুখ্যমন্ত্রী।” মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের পাশাপাশি স্মারক, উপহার, উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছে সুনীলের প্রাক্তন দুই ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলও। আইএম বিজয়ন, ক্লাইম্যাক্স লরেন্স, মেহতাব হোসেন, আলভিটো ডি’কুনহা-সহ সুনীলের প্রাক্তন সতীর্থরাও তুলে দেন স্মারক। সংবর্ধনা দেয় ফেডারেশন ও আইএফএ-ও। ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুজিত বসুও।