কলকাতা রাজনীতি

এসআইআর-এর প্রতিবাদে রাজপথে মমতা, ‘দিল্লি চলো’ ডাক অভিষেকের

এসআইআর-এর প্রতিবাদে কলকাতায় মিছিল ও জনসভা করে চাঁছাছোলা ভাষায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নাম না-করে মীরজাফর সম্বোধনে তিনি ইঙ্গিত করলেন অমিত শাহকে ৷ বিদ্রুপের সুরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে বললেন ‘কুর্সিবাবু’ ৷ এদিকে, এসআইআর-এর প্রতিবাদে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছেন অভিষেক ৷ বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর বিরোধিতা করে আজ ধর্মতলার কাছে আম্বেদকর মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস । সংবিধানের প্রতিরূপ হাতে নিয়ে রাস্তায় নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষ, বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এবং মতুয়া সমাজের সদস্যরা অংশ নেন এই মিছিলে । মুখে ছিল এসআইআর বিরোধী স্লোগান ৷ মিছিলের শেষে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর অভিযোগ, “বাংলার দু’কোটি মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ছক কষছে বিজেপি । হিসেব করে ওরা বুঝেছে আমাদের ভোট 40 শতাংশ, ওদের 39 শতাংশ । তাই এখন পরিকল্পনা – দু’কোটি নাম বাদ দিয়ে বাংলাকে দখল করতে হবে । কিন্তু ভুলে যেও না, এবার মানুষই তোমাদের জবাব দেবে ।” নাম না-করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করে মমতা বলেন, “মীরজাফরবাবু, আপনি অসমে কেন এসআইআর করলেন না ? যেখান দিয়ে বাংলাদেশিরা আসে, সেখানেই তো এসআইআর করা উচিত ছিল ! নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, অসম – ওখান দিয়ে তো সীমান্ত পেরিয়ে মানুষ আসে । সেখানে একটাও এসআইআর নয়, কেবল বাংলায় করছেন কেন ? কারণ বিজেপির লক্ষ্য বাংলাকে ছোট করা, বাংলার মানুষকে অপমান করা ।” তিনি আরও বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ বাংলাদেশি হয় না, যেমন হিন্দি বা উর্দু ভাষায় কথা বললেই কেউ পাকিস্তানি হয়ে যায় না । এই অর্ধশিক্ষিতদের দলকে ইতিহাস শেখাতে হবে । স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় এরা কোথায় ছিল ? তখন তো বিজেপির জন্মই হয়নি ! এখন এসে স্বাধীনতার ইতিহাস শেখাচ্ছে ।” মমতার অভিযোগ, “এসআইআর-এর নামে আসলে এনআরসি-র মতো বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি । ওরা মানুষের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে চায় । এবারই তো নির্বাচনে জিততে পারেনি – তবুও ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে আঁতাত করে ভোটের শতাংশ বাড়িয়ে দিল । তাতেও কয়টা বেশি আসনে জিতেছে ? জানে, মানুষের ভোটে জেতা সম্ভব নয়, তাই নোটে জিততে চায় ।”

নোটবন্দির প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নোটবন্দি করে বলেছিল কালো টাকা ফিরিয়ে আনবে । উলটে নিজেদের কালো টাকা সাদা করেছে । শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছিলেন, তবুও কোনও শোকপ্রস্তাব আনেনি । আজ সেই সরকারের অধীনে এলআইসির মতো প্রতিষ্ঠানও আর নিরাপদ নয় । যখন যা খুশি করছে – দেশটা নোটবন্দি থেকে এখন ভোটবন্দিতে পৌঁছে গিয়েছে ।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহলে এই ভোটার তালিকার ওপর ভর করেই তো তোমরা 2024-এ ক্ষমতায় এসেছো ! আগে নিজেরা ইস্তফা দাও, তারপর এসআইআর করবে । একজনও যোগ্য ভোটারের নাম বাদ গেলে আমরা দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব ।”

মমতা আরও বলেন, “হকার, দোকানদার, পরিযায়ী শ্রমিক – সবাই আতঙ্কে আছে, তাদের নাম বাদ যাবে কি না । এটাই বিজেপির রাজনীতি – ভয় দেখাও, বিভ্রান্তি ছড়াও, মানুষকে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বাধ্য করো । কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি, বাংলার একজনকেও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না । এই বাংলায় জন্মানো মানুষকে বাংলাদেশি বলার সাহস কারও নেই ।” কমিশনকে নিশানা করে মমতা বলেন, “কমিশনের আধিকারিক এখন কুর্সিবাবু – মোদিবাবু, শাহবাবুকে খুশি করতে ইতিহাস লিখতে চাইছেন । কিন্তু এই ইতিহাস পাতিহাস হয়ে যাবে । বাংলার মানুষ সব মনে রাখে । বিজেপির এই মীরজাফর রাজনীতি বাংলার মাটিতে চলবে না ।” তৃণমূলের আহ্বান, এসআইআর-এর আড়ালে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামুক প্রতিটি নাগরিক । আর মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “যদি একজন ন্যায্য ভোটারের নামও বাদ যায়, বাংলার মানুষ দিল্লি গিয়ে এই অন্যায়ের জবাব দেবে ।” এদিন বিজেপি এবং কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও । তাঁর কথায়, “ময়দান থেকে জোড়াসাঁকো – এই চার কিলোমিটার পথ হাঁটলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ । দুই দিনের প্রস্তুতিতে এই মিছিল সম্ভব হয়েছে । ভাবুন তো, যদি দুই মাস সময় পাই, তাহলে দিল্লিতে কী করতে পারি ! এবার এসআইআর-এর অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বাংলার মানুষের সম্মান রক্ষায়, দিল্লি চলো ।”