ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, ভাই-বোনের সম্পর্কের সবচেয়ে ভালোবাসায় ভরা উৎসব। ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা… এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বোনেরা ফোঁটা দেন ভাইদের কপালে। পঞ্জিকা মতে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ কালীপুজোর ২ দিন পরে পালিত হয় ভাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। কালীপুজো অমাবস্যায়। পরের দিন প্রতিপদ পূর্ববঙ্গীয় বাঙ্গালি হিন্দুদের ভাইফোঁটা পালন করেন। বোন দিদিরা দাদা ও ভাইদের মঙ্গল কামনায় শতবর্ষের আয়ু কামনা করে ফোঁটা দেন। পরিবর্তে দাদারা বোনদের আশীর্বাদ করেন। ভাই ছোট হলে দিদির স্নেহের পরশে আহ্লাদিত হয়। সমাজজীবনে ভাইবোনের পবিত্র এই বন্ধনের প্রতীকী অনুষ্ঠান ভাতৃদ্বিতীয়া।
ভাইফোঁটা শুধু বাংলায় নয়, দেশজুড়েই এই প্রথা পালিত হয়। কালী পুজোর পর ভাতৃদ্বিতীয়ান্তে মণিপুরে বলে ‘হিয়াংসেই তিথি’। এই তিথিতে সেখানে পালিত হয় ‘নিংগল চাকৌবা’। বিবাহিত মেয়েদের নিমন্ত্রণ আসে বাপের বাড়ি থেকে। উত্তর ভারতে এই প্রথার নামক ‘ভাই দুজা’, নেপালে বলে ‘ভাই টিকা’। গুজরাটে পরিচিত ‘ভাই বিজ’ নামে। মহারাষ্ট্র ও গোয়াতে এই উৎসব পালিত হয় ‘ভাববিজ’ নামে। কোথাও কোথাও ভ্রাতৃদ্বিতীয়াকে যমদ্বিতীয়াও বলে। খুব বেশি প্রসারিত না হলেও অন্ধ্রপ্রদেশে চিলেলা পাংডাগা উৎসবে ভাইবোনেরা পারস্পরিক শুভেচ্ছা ও উপহার বিনিময় করেন।
অন্যদিকে, বৈদিক সাহিত্যে দীপদান মহোৎসব একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। কার্তিক মাস দীপদানের মাস। পদ্মপুরাণ, স্কন্ধপুরাণ শাস্ত্রগুলিতে এই দীপদানের উল্লেখ আছে। গৌড়ীয় ব্রাহ্মণরা এই মাসকে দামোদর মাসও বলে থাকেন। ঋতুকালের বিচারে সময়টা হেমন্ত। এই ঋতুর আগমনে দেবী বসুন্ধরা শান্তমূর্তি ধারণ করেন। এই কার্তিক মাসে ঘৃত বা তিল তেলের প্রদীপ, কর্পূর মঙ্গলসূচক। যমলোকে এসে স্বয়ং যম ভগিনী যমুনাও যমকে ফোঁটা দেন। পার্থিব দুনিয়াতেও ভাই-এর ওপর যেন যমরাজ দৃষ্টি না দেন তাঁর প্রার্থনা জানায় বোনেরা।
আবার মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর বোন শুভদ্রা সম্পর্কে একটি কাহিনি কথিত রয়েছে। বলা হয়, নরকাসুর দমনের পর শ্রীকৃষ্ণ এই ভাইফোঁটার দিনেই বোন শুভদ্রার কাছ থেকে ফোঁটা নেন। তার পর থেকেই ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে ভাইফোঁটা। বর্ণনা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর বোন শুভদ্রা সম্পর্কে একটি কাহিনি কথিত রয়েছে। বলা হয়, নরকাসুর দমনের পর শ্রীকৃষ্ণ এই ভাইফোঁটার দিনেই বোন শুভদ্রার কাছ থেকে ফোঁটা নেন। তার পর থেকেই ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে ভাইফোঁটা।
জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের ভাইফোঁটার দিনক্ষণ
২০২৫ সালে ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া পালিত হবে ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার।
ভাইফোঁটার প্রতিপদ তিথি: ২২ অক্টোবর, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। যাঁরা প্রতিপদে ফোঁটা দেন, তাঁরা এই সময়ের মধ্যে ফোঁটা দিতে পারেন। মূলত পূর্ববঙ্গীয় বা বাঙালদের মধ্যে এই রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে।
দ্বিতীয়া তিথি:
শুরু: ২২ অক্টোবর, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫/১৬ মিনিট থেকে।
শেষ: ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত।
দ্বিতীয়ার দিন ভাইফোঁটার শুভ মুহূর্ত / তিলক মুহূর্ত
২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ১৩ মিনিট থেকে বিকাল ৩টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত (অপরাহ্ণ কাল, ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের শুভ সময়)।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী:
- দ্বিতীয়া তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর (বাংলা ৫ কার্তিক, বুধবার) রাত ৮টা ১৮ মিনিটে।
- দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক, বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে।
অর্থাৎ, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে ভাইফোঁটার মূল পালন ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী:
- দ্বিতীয়া তিথি শুরু: ২২ অক্টোবর (বাংলা ৫ কার্তিক, বুধবার) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট ৩ সেকেন্ডে।
- দ্বিতীয়া তিথি শেষ: ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক, বৃহস্পতিবার) রাত ৮টা ১৯ মিনিট ৪ সেকেন্ডে।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে ভাইফোঁটা পালন করা হবে ২২ অক্টোবর সন্ধ্যার পর বা ২৩ অক্টোবর সকালে।
অর্থাৎ, উভয় মতেই ২২ অক্টোবর রাত থেকে ২৩ অক্টোবর দিনভর ভাইফোঁটা তিথি বিদ্যমান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৩ অক্টোবরকেই শুভ দিন হিসেবে ধরা হচ্ছে।


