বিনোদন

১২ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে আসছে ‘বিজয়ার পরে’, সামনে এল টিজার

মুক্তির পথে নবীন পরিচালক অভিজিৎ শ্রীদাস-এর ছবি ‘বিজয়ার পরে’৷ এই ছবির হাত ধরে পরিচালনায় অভিষেক করলেন পরিচালক। ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বেঙ্গলি প্যানোরামা বিভাগে দেখানো হয়েছে তাঁর ছবি ‘বিজয়ার পরে’। প্রথম বড় ছবিতেই এই পরিচালক নিজের জাত চিনিয়েছেন। পেয়েছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের প্রশংসা। এবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে এই ছবি ৷ ১২ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে ‘বিজয়ার পরে’। সম্প্রতি সামনে এল ছবির অফিসিয়াল পোস্টার ৷ অনেকদিন পর আবার পর্দায় ফিরছেন প্রবীণ অভিনেতা দীপঙ্কর দে ৷ সঙ্গে রয়েছেন মমতা শংকর ৷ ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘আবহমান’ ছবিতেও দেখা গিয়েছিল এই জুটিকে। তারপর আবার ‘বিজয়ার পরে’ ছবিতে। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কেও দেখা যাবে এই ছবিতে। এই ছবিতে মমতা শঙ্করের নাম অলকানন্দা, দীপঙ্কর দে-র নাম আনন্দ। তাঁরা গুলঞ্চ বনেদি বাড়ির দম্পতি। ক্রমশ নিরুদ্দেশ হতে থাকা মানুষগুলোকে খুঁজে বেড়ান। এই মানুষগুলো আর কেউ নন, তাঁদের পুত্রকন্যা। বাবা-মায়ের শেষ বয়সে সময় দেওয়া তো দূর অস্ত, একসঙ্গে থাকার ইচ্ছেটুকুও কারও মধ্যে নেই। কর্মব্যস্ততা আর পরিস্থিতির চাপে তাঁরা থাকেন দূর শহরে। সারাদিন দৌড় আর দৌড়। ফলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ঘিরে জন্ম নেয় চরম একাকিত্ব। গুলঞ্চ বাড়িতে তাঁরা টিমটিম করে জ্বলতে থাকেন। প্রদীপ শিখার মতো। খাঁ খাঁ বাড়িতে হাতড়ে বেড়ান হারানো অতীত। ছায়াছবির মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছেলেমেয়েদের মুখ। পরমুহূর্তেই বাস্তবে ফেরেন। চোখ ভিজে যায় জলে। দু’জনেই অসামান্য দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন নিজেদের অসহায়তা। বর্তমান সময়ের এক জ্বলন্ত সমস্যা পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক। ছবির প্রেক্ষাপট দুর্গাপুজো। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ির মেয়ের ঘরের ফেরার গল্প। এই মেয়েই স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। পর্দার মৃন্ময়ী ওরফে মিনু। ছবির শুরুতেই বিসর্জনের প্রতিমার সাজে চালচিত্রের উপর মানবী রূপী দুর্গার ভূমিকায় স্বস্তিকার লুক এবং অভিনয় অসামান্য। প্রথম দৃশ্যেই দর্শকদের মন জয় করে নেন।  ‘বিজয়ার পরে’ ছবিতে তাঁর অভিনয় আলাদা উচ্চতায় পৌঁছেছে। মিনু চরিত্রটি নির্মল। পরিবারের মধ্যে একঘরে। বাবার ত্যাজ্যকন্যা। পিছনে রয়েছে বড় কারণ। দু’জনের মধ্যে দূরত্ব রচিত হলেও, বৃদ্ধ বাবা পাড়াতুতো নাতনির মধ্যে কন্যা মিনুকে আজও দেখতে পান। অভিমানের পাহাড় উঠেছে মধ্যিখানে। তবে বাবা-মেয়ের সম্পর্কের সুতোটা পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে যায়নি। এমন নিঃসঙ্গ বিষাদের মাঝেই এসে পড়ে দুর্গাপুজো। নতুন উদ্যমে জীবন শুরু হয়। সেই উপলক্ষে দূরে থাকা ছেলেমেয়েদের ঘরে ফিরতে বলেন বৃদ্ধ দম্পতি। আমন্ত্রণ যায় মিনুর কাছেও। তারপর ঘটতে থাকে একটার পর একটা ঘটনা। শেষটা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। ছবিতে অন্যান্য বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন মীর, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, তুলিকা বসু-সহ বহু অভিনেতা রয়েছেন নানা চরিত্রে । একজন মনস্তত্ত্ববিদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মীর। পুরোপুরি সিরিয়াস চরিত্র। নেই কমেডির ছিটেফোঁটা। বিদীপ্তা চক্রবর্তী অভিনীত বড়বউ চরিত্রটি নেতিবাচক। তবে নজর কেড়েছেন। বড় ছেলে হিসেবে পদ্মনাভ দাশগুপ্ত যথারীতি মার্জিত। অন্যান্যদের অভিনয়ও প্রশংসাযোগ্য। ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা সবই একার হাতে সামলেছেন অভিজিৎ শ্রীদাস। সংগীত পরিচালক রণজয় ভট্টাচার্য ছবির গানগুলোয় সুরুচির ছাপ রেখেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে আধুনিক, প্রতিটি গানের সঙ্গীতায়োজন অপূর্ব। গান গেয়েছেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী, রণজয় ভট্টাচার্য, ঈশান মিত্র, শাওনি মজুমদার। রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর কোরিওগ্রাফি করেছেন মমতা শঙ্কর। যদিও নিজে নাচে অংশ নেননি। নতুন বছরের শুরুতে একটি অসাধারণ বাংলা ছবি উপহার পেতে চলেছেন দর্শকরা।