জিএসটি বাস্তবায়নের ফলে রাজ্যগুলির যে আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানা ছিল। সেই কারণেই প্রথম পাঁচ বছর রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটরস জেনারেল তথা ক্যাগ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, জিএসটি বাস্তবায়নের পর প্রথম দু’বছরে সেস থেকে আদায় করা ৪৭ হাজার ২৭২ কোটি টাকা অন্যত্র খরচ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ সেই টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যগুলির পাওনা ছিল। ক্যাগের স্পষ্ট বক্তব্য, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ আইন বিরুদ্ধ। জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে ক্যাগের রিপোর্টে বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন যে, দেশের সিএফআই'(কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া) ছাড়া জিএসটির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও আইন নেই। অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তিনি একথা জানান বলে দাবি করেন সীতারমণ। যদিও ক্যাগের রিপোর্ট ধরা পড়েছে, ক্ষতিপূরণ ঘিরে কেন্দ্র নিজেই সিএফআইয়ের আইন লংঘন করেছে। ক্যাগের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, জিএসটির ৪৭,২৭২ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ঘিরে কেন্দ্র নিজেই সিএফআইয়ের আইন ভেঙেছে। জিএসটি কম্পেনশেন সেস ফান্ডে টাকা না পাঠিয়ে, সিএফআইতে এই টাকা ফেরত দিয়েছে সরকার। ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-১৯ সালের ঘটনা- যেখানে কেন্দ্র, ওই আর্থিক মূল্য অন্য খাতে ব্যবহার করেছে বলে ক্যাগের রিপোর্টে ধরা পড়ছে। এইভাবেই ওই অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতি কম দেখানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। যা কার্যত নির্দিষ্ট আইন লংঘন। অডিটের সময় দেখা গিয়েছে, স্টেটমেন্ট ৮, ৯, ১৩-তে যে শুল্ক সংগ্রহের তথ্য রয়েছে, আর যে অর্থমূল্য জিএসটি ক্ষতিপূরণ শুল্কের ফান্ডে যা গিয়েছে তাতে বড়সড় গরমিল রয়েছে। এর ফলে ফান্ডের অর্থে কমতি দেখা যায়, যা শর্ট ক্রেডিটিং এর নামান্তর। এই ঘটনার জেরে ২০১৭ সালে জিএসটি কমপেনসেশন অ্যাক্ট ২০১৭ সালের হিসাবে সরকার আইন ভেঙেছে বলে ক্যাগের রিপোর্টে উঠে আসছে। কেন্দ্র জিএসটি কম্পেনসেশন ফান্ডে সংগৃহিত শুল্ক না রেখে ‘কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া’ বা সিএফআই-তে রাখে। যে ফান্ড থেকে অন্যত্র বহু ক্ষেত্রে সরকার টাকা খরচ করেছে বলে ক্যাগের রিপোর্টে উল্লেখ। জানা গিয়েছে, ক্যাগের রিপোর্ট পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রক বিষয়টির যথোপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। পাশপাশি, যোগ্য জায়গায় আর্থিক ট্রান্সফারের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে কেন্দ্র। জিএসটি কম্পেনসেশন সেস অ্যাক্টের আইন অনুযায়ী, গোটা বছরে যে শুল্ক সংগৃহিত হবে তা রাখা হবে জিএসটি কম্পেনসেশন ফান্ডে। যে অ্যাকাউন্টটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট হিসাবে গণ্য হয়। খুব নির্দিষ্টভাবে আইনে বলা রয়েছে যে, এই অ্যাকাউন্ট থেকে রাজ্যগুলিকে তখনই টাকা দেওয়া হবে যদি তাদের রাজস্বে ঘাটতি পড়ে। সন্দেহ নেই, ক্যাগ যে তথ্য ফাঁস করেছে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আরও শক্ত করল। এর পর কেন্দ্রের কাছে নবান্নের দাবি আরও জোরালো হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অতীতে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় ক্যাগের রিপোর্টই কংগ্রেস তথা মনমোহন সিংহ সরকারকে বিপাকে ফেলেছিল। টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতি, কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস করে দিয়েছিল। এ ঘটনা তেমন নয় ঠিকই। কিন্তু আর্থিক সংকটের পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করারও কাজের কথা নয়।