প্রিয়াঙ্কা সেনগুপ্ত , পশ্চিম মেদিনীপুর: দীর্ঘ এক বছর পর মেদিনীপুর সফরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, করোনা পরিস্থিতির পর থেকে এটিই তার প্রথম দক্ষিণবঙ্গ সফর। আজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণের বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘন্টা আগেই পৌঁছে যান। ফলে নির্ধারিত সময় ৪টার অনেক আগেই (সাড়ে তিনটা নাগাদ) শুরু হয় প্রশাসনিক সভা । সমস্ত কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সদ্য প্রাক্তন মুখ্য সচিব (বর্তমানে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট এর চেয়ারম্যান) রাজীব সিনহা, স্বরাষ্ট্র সচিব এইচকে দ্বিবেদী, অর্থ সচিব মনোজ পন্থ প্রমূখ। প্রশাসনিক সভার শুরুতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কভিড পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।আলোচনার শুরুতেই মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কোভিড পজিটিভ রেজাল্টের ক্ষেত্রে সিটি ভ্যালুর উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। এই বিষয়ে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল এবং মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নিমাই চন্দ্র মন্ডলকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন, প্রাক্তন মূখ্য সচিব রাজীব সিনহা বলেন কোভিড পজিটিভ রেজাল্টের ক্ষেত্রে প্রথমেই লক্ষ্য করতে হবে ওই নমুনায় সিটি ভ্যালুর পরিমাণ কত!আরটি-পিসিআর রেজাল্টে, প্রতিটি পজিটিভ রেজাল্টের পাশে ওই নমুনার সিটি ভ্যালু উল্লেখ থাকে।সিটি ভ্যালু ২০ কম হলে,ওই ব্যাক্তির শরীরে ভাইরাস লোড অনেক বেশি। তাই তিনি প্রবলভাবে সংক্রমিত।সেক্ষেত্রে,তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বেশি।আর ওই আক্রান্তেকও গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে করোনা হাসপাতালে।তবে সিটি ভ্যালু ২০র বেশি থাকলে ওই ব্যাক্তির থেকে সংক্রমন ছড়ানোর সম্ভাবনা কম।কারন ২০র বেশি সিটি ভ্যালু মানে,ওই ব্যাক্তির শরীরে ভাইরাস লোড কম।সেক্ষেত্রে বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা করা যেতে পারে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই কলকাতা মেডিকেল কলেজের নির্দেশানুযায়ী এই সিটি ভ্যালুর উপর গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে মূলত কলকাতায়।পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো এলাকায় সেই পদ্ধতি এখনও অবলম্বন করা হয়নি বুঝতে পেরেই মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজীব সিনহা এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক’কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন সিটি ভ্যালু কুড়ির বেশি থাকলে তাকে হোম আইসোলেশন এ বা সেফহোমে রেখেও চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে কুড়ির কম থাকলে একদিকে যেমন তার চিকিৎসার উপর জোর দিতে হবে তেমনই তার থেকে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় সেদিকেও নজর রাখতে হবে ডাক্তার রাজীব সিনহা বলেন এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করলে মৃত্যুর হার কমবে মুখ্যমন্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন এখানে শালবনি করো না হাসপাতলে একটু সমস্যা ছিল বর্তমানে সেই সমস্যা মিটে গেছে, ভালোভাবে চিকিৎসা হচ্ছে। অপরদিকে রাজীব সিনহা পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডঃরশ্মি কমল কে নির্দেশ দেন হোম আইসোলেশন এ থাকলেও নিয়মিত করোনা সংক্রমিত দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রতিদিন তাদের ফোন করতে হবে। প্রথম চার পাঁচদিন কোভিডের ক্ষেত্রে কিছু বোঝা যায়না সাত-আট দিন পর থেকেই নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিলে আক্রান্ত কে সঙ্গে সঙ্গে করোনা হাসপাতাল ভর্তি করতে হবে। এদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কর্মাধক্ষ্য নির্মল ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান বেসরকারি এজেন্সিগুলো কোভিড যোদ্ধাদের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের অত্যন্ত কম পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন তিনি জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কে কড়া নির্দেশ দেন বেসরকারি এজেন্সিগুলো যদি ঠিকঠাক বেতন না দেয় তবে তাদের বাদ দিয়ে নতুন এজেন্সি নিতে একই সাথে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে দ্রুত স্থায়ী সুপার নিয়োগের বিষয়টিতেও জেলাশাসক কে নজর দিতে বলেন। জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল জানান এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।