সোমবার থেকেই নতুন জিএসটি লাগু হচ্ছে গোটা দেশে। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তার সুফল বুঝিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে’ সে ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার জেলার বেশ কিছু পুজো উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে তাঁর বক্তব্য, ‘জিএসটির যে সুফল আপনারা পাচ্ছেন, সেটা আপনারা পান আমি চাই। তাতে রাজ্যের সব টাকা কেটে নিলেও আমার কিছু যায় আসে না। মানুষ সুফল পাক।…তবে রাজ্যের টাকা যাবে, ক্রেডিট আপনারা নেবেন, সেটা তো হবে না। ক্রেডিট রাজ্যের, ডিস ক্রেডিটটা আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকার)। আপনারাই হিরেতে ট্যাক্স বসাননি, জিরে-তে বসিয়েছিলেন।’ তাঁর কথায়, ”কাটল টাকা আমাদের, প্রচার হচ্ছে ওঁদের।” শুধু তাই নয়, একাধিক প্রকল্পের টাকা বকেয়া রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরপরও রাজ্যকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রবিবার, মহালয়ার পুণ্যতিথিতে শহরের একাধিক পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমেই এদিন সেলিমপুর পল্লীর দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর বাবুবাগান, বান্ধব সম্মিলনী, যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লী সহ কলকাতা তথা বাংলার একাধিক পুজো ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই মঞ্চ থেকেই একদিকে যেমন বাংলা এবং বাঙালি অস্মিতাকে নষ্ট হতে দেবেন না বলে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, একইসঙ্গে নয়া জিএসটি নিয়ে মোদি সরকারকে কটাক্ষও করেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”বিমা থেকে জিএসটি তুলে নিতে প্রথমে আমিই চিঠি লিখেছিলাম। মানুষের কষ্ট হচ্ছিল। এর কৃতিত্ব সম্পূর্ণ রাজ্যের।” শুধু তাই নয়, এর জন্য রাজ্য যে ব্যাপক রাজস্ব হারাচ্ছে তাও উল্লেখ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”এজন্য রাজ্যের রাজস্ব লোকসান হচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা। বাদবাকি নিয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”টাকাটা কেটেছে রাজ্যের জিএসটি থেকে। এজন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না”। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি রাজ্যগুলিকে ঘুরিয়ে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু ১০০ দিনের কাজের টাকা-সহ একাধিক প্রকল্পের টাকা বকেয়া”। কিন্তু এরপরেও মানুষ এতে উপকৃত হবে। তাতে তিনি খুশি বলে জানান রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। দেবীপক্ষের সূচনায় এ দিন বিকেল পাঁচটা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদী। সেখানেই তিনি উল্লেখ করেন, ‘বেশ কিছু খাদ্যপণ্য, ওষুধ, সাবান, জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমা-সহ অন্য বেশ কিছু পণ্য ও পরিষেবা করমুক্ত করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কর কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে।’ তবে আগে বিভিন্ন ওষুধ, জরুরি পণ্যে কেন ট্যাক্স বসানো হয়েছিল? সেই প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘ক্যান্সারের ওষুধে, কিডনির ডায়ালিসিসি, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে ট্যাক্স বসানো হয়েছিল, এখনও অনেক ওষুধের দাম লাগামছাড়া।’ সম্প্রতি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তের একটি নির্দেশকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। দিল্লির দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি বৈঠকে করেন রেখা। সেখানে প্রতিটি পুজো মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমার পায়ের তলায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছবি রাখার নিদান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে এ দিন সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘কোথাও বলছে, মা দুর্গার পায়ের তলায় কার নাকি ছবি রাখতে হবে। মা দুর্গার পায়ের তলায় তো মহিষাসুর থাকে। পুজোর নিয়ম জেনে নাকি না জেনে বলেছে জানি না। আমার তো মনে হয় ওঁরা কিছু জানেই না।’


