ওড়িশায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি । অভিযোগ, শুধু কাজের জায়গায় নয়, বাংলায় কথা বললেই অপমান, নিগৃহীত, এমনকী শারীরিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বাংলার শ্রমিকরা । ইতিমধ্যেই, এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান । সরব হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামও । এই পরিস্থিতিতে এবার গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সোমবার মুর্শিদাবাদ সফরের প্রথম দিনে বহরমপুরে দাঁড়িয়ে কড়া বার্তা দিলেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে খবর আছে, ওড়িশায় আমাদের রাজ্যের লোকজন কাজ করতে গিয়ে বাংলায় কথা বলেছে বলে তাঁদের মারা হয়েছে ! কেন হবে এটা ? বাংলায় কথা বলা কী দোষের ? শুধু ওড়িশায় নয়, বিহার, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রেও বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে ৷ এই সমস্ত রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বলছি, এসব বন্ধ করুন । স্বরাষ্ট্রসচিবকে বলেছি বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারের সঙ্গে কথা বলতে । ইতিমধ্যে, বাংলার ডিজি ওড়িশার ডিজির সঙ্গে কথা বলেছেন ।” গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্থা, মারধর, এমনকী লুটপাটের অভিযোগ সামনে এসেছে । কোথাও তাঁদের কাছ থেকে জোর করে উপার্জনের টাকা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ কোথাও আবার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে । শ্রমিকদের অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশের কাছেও সঠিক সহায়তা মিলছে না । এই সব খবর সামনে আসতেই রাজ্য সরকার সক্রিয় হয় । পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম । অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত নিপীড়িত শ্রমিকদের উদ্ধার করে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন তিনি । পাশাপাশি, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন সাংসদ ইউসুফ পাঠান ও সামিরুল ইসলাম । সূত্রে খবর, বিষয়টিকে একেবারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে । রাজ্য সরকারের তৈরি পরিযায়ী শ্রমিক সেলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নজর রাখা হচ্ছে এমন ঘটনার উপর । এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওড়িশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই মারধর করা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের । আমাদের এখানেও কিন্তু দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন । তাঁরা বিভিন্ন রাজ্যের, বিভিন্ন ধর্মের । মনে রাখবেন, আপনারা অত্যাচার করেন । আমরা করি না । এটাই আমাদের আর আপনাদের মধ্যে পার্থক্য ।” এরপর তিনি বলেন, “তাই বলছি, হিংসার তাস তুলে দেবেন না কারও হাতে । আমরা আপনাদের রাজ্যের শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখব ৷ কিন্তু, কোথাও যদি কোনও সমস্যা হয়, কোনও বিশেষ সংগঠনের সদস্য এসে যদি তাঁদের হুমকি দেয়, সেই দায়িত্ব কিন্তু আমি নিতে পারব না ।” শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় রাজ্য যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সোমবারের বার্তায় তা আরও একবার স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী ।
