রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়ার শুরু হওয়ার পর থেকে একের পর এক বিএলও-র মৃ্ত্যুর ঘটনা সামনে আসছে ৷ অভিযোগ, বিপুল কাজের চাপই মৃত্যুর কারণ ৷ এই আবহে এসআইআর প্রক্রিয়া অবিলম্বে স্থগিত করার কথা জানিয়ে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে তিন পাতার চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ চিঠিতে রাজ্যে বিএলওদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ চিঠিতে তিনি লেখেন, এসআইআর প্রক্রিয়ার এই অব্যবস্থা আর সহ্য করা যাচ্ছে না ৷ মানুষের জীবনের দাম দিয়ে এই প্রক্রিয়া করা হচ্ছে ৷ কোনও সঠিক পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছাড়া এসআইআর-এর দায়িত্ব হঠাৎ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের উপর ৷ এবং এই অবস্থায় এসআইআর একটি বিপজ্জনক মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থাকতেই বিরোধিতায় সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল ৷ এর জেরে রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্কে এক নতুন মাত্র যোগ হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণে ফাঁক রয়েছে ৷ তেমনই এসআইএর-এ কী কী নথি বাধ্যতামূলক, তাও পরিষ্কার নয় ৷ বহু জায়গায় সময়সীমা, ডকুমেন্টেশন ও জনসংযোগ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে ৷ ভুল-ত্রুটিতে ভরা নির্দেশনা ও বারবার নিয়মে বদলের ফলে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি BLO-দেরও হয়রান হতে হচ্ছে ৷
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, তৃণমূল স্তরে তথ্য সংগ্রহ ও অনলাইন তথ্য আপলোড করতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন বিএলওরা ৷ আর এই অজুহাতে তাঁদের ‘শো-কজ’ নোটিস পাঠানো হচ্ছে ৷ মূল সমস্যা সমাধানের বদলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে ৷
তিনি লেখেন, “ভয় দেখানো ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এখন এসআইআর-এর অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা বা উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা না থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করা হচ্ছে ৷ সামান্য ভুল-ত্রুটি হলেই শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ৷ এতে একেবারে তৃণমূল স্তরে কাজ করা ভোটকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে ৷”
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, “জলপাইগুড়ির মালবাজারের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, বিএলও হিসেবে কাজ করছিলেন ৷ এসআইআর-এর চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজেকে শেষ করেছেন ৷ শুধু তিনিই নন- এই অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং নির্ধারিত সময়সীমার কারণে আরও কয়েকজন কর্মী মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে পড়েছেন ৷ কারও কারও মৃত্যু হয়েছে ৷ প্রচণ্ড চাপের মধ্যে বিএলও-রা নিজেদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করছেন ৷ অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ৷” মমতার অভিযোগ, যেমন ফসল কাটার মরশুমে কৃষক-শ্রমিকদের মাঠে কাজ করার কথা, তেমনই প্রশাসনিক কর্মীদেরও তাঁদের দফতরের কাজে ব্যস্ত থাকার কথা ৷ অথচ কোনও বাস্তব হিসেব-নিকেশ ছাড়া এই সময়ে এসআইআর চালু করা হয়েছে ৷ ফলে একদিকে কৃষকরা, অন্যদিকে শিক্ষকরা এবং বিভিন্ন দফতরের কর্মীরা গুরুতর সমস্যায় পড়ছেন ৷ এভাবে তাড়াহুড়ো করে চললে প্রকৃত ভোটারদের তথ্য নথিভুক্ত করার সময় ভুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৷ এর ফলে নির্বাচনী তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হলে তা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য বিপজ্জনক হবে ৷ তিনি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি অগ্রাহ্য করলে ক্ষতির পরিমাণ সামলানো যাবে না ৷ সঠিক প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত সময় এবং বাস্তবসম্মত সূচি ছাড়া এমন বিশাল কাজ করা সম্ভব নয় ৷ এখন এসআইআর সংক্রান্ত অনিয়ম, বিভ্রান্তি ও তৃণমূল স্তরের পর্যায়ের কর্মীদের অস্বাভাবিক চাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ জরুরি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, কমিশন অবিলম্বে ব্যবস্থা নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসআইআর পুনর্মূল্যায়ন করুক ৷


