দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের আগে থেকেই রাজনীতির পারদ চড়ছিল। বিজেপি ও ওড়িশা সরকারের একের পর এক অভিযোগের জবাব এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে সোমবার সরকারি সফরে এসে একাধিক বিষয়ে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই জগন্নাথ মন্দির ইস্যুতে জবাব দিলেন তিনি। পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে তৈরি দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর থেকে চলছে একাধিক বিতর্ক। মন্দিরের নাম থেকে স্থাপন-সহ একাধিক বিষয় ইস্যু করে তোপ দেগেছে গেরুয়া শিবির। এমনকী দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের নাম নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন ওড়িশার বিদ্বজনদের একাংশ। পাশাপাশি পুরীর মন্দির থেকে পবিত্র নিমকাঠ দিঘায় আসা এবং তা ব্যবহার ঘিরেও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। এসব নিয়ে এদিন মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি দফতরে আচমকা ‘সারপ্রাইজ’ পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক, কালীপুজো, দুর্গাপুজো করলে প্রশ্ন হয় না। জগন্নাথধামটা খুব গায়ে লেগেছে না?” সম্প্রতি বিজেপির তরফে মন্দিরের নিমকাঠ নিয়ে চুরির অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেই অভিযোগের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি নাকি নিমগাছও চুরি করেছি। আরে, আমার বাড়িতেই তো চারটে নিমগাছ আছে। ক’টা দরকার জিজ্ঞেস করুন। আমাদের চুরি করতে হয় না। চোরের মায়ের বড় গলা!” জগন্নাথ মন্দিরে স্থাপিত বিগ্রহ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “আমাদের মার্বেলের তৈরি মূর্তি ছিল। মূর্তি তো কিনতেও পাওয়া যায়। আমার বাড়িতেও আছে। ওটা নিয়ে এসেছেন দ্বৈতপতি। তাঁকে নাকি প্রশ্ন করা হয়েছে কেন পুজো করতে গিয়েছিলেন!” এরপরেই তোপ, “নোটিফিকেশন দিয়েছে কেউ যাবে না জগন্নাথধামে। এত গায়ে লাগছে কেন? আমরা তো পুরীতে যাই। আমি পুরীতে গেলে আরএসএস, বিজেপি বিক্ষোভ দেখায়। ভুলে গিয়েছেন? লজ্জা করে না? জগন্নাথধাম নিয়ে এত হিংসা!” ওড়িশা সরকারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “আপনাদের যখন আলুর টান পড়ে বাংলা জোগায়। আমি ওড়িশাকে ভালোবাসি। সাইক্লোনে বিদ্যুতের সব ভেঙে যায়, তাও সাহায্য পাঠাই। বাংলার পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি পুরীর মন্দিরে যান রথ ও উল্টোরথে। আমরা যদি একটা জগন্নাথধাম করি, আপনাদের আপত্তির কি আছে? আপনারাও ভালো থাকুন, বাংলাও ভালো থাকুক।”রাজনৈতিক মহলের মতে, জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাজ্যের সম্মান; দুইই সুরক্ষিত রাখতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই বিতর্ক যে এখানেই থামছে না, তা বলাই বাহুল্য।
