নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ খেয়ে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে একাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এক কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেল্থ সার্ভিস (DGHS)-এর তরফে জানানো হয়েছে, দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের কাশি এবং সর্দির সিরাপ একেবারেই দেওয়া যাবে না। এমনকি, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের জন্যও এই ধরনের ওষুধ প্রযোজ্য নয় বলেই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, শিশুদের ক্ষেত্রে যেকোনও ওষুধ ব্যবহারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কাশি বা সর্দির সিরাপ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। একাধিক ওষুধ একসঙ্গে না দেওয়া, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকটি খতিয়ে দেখা, সঠিক ডোজ মেনে চলা, এসব দিক মাথায় না রাখলে ওষুধ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলায় ৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাজস্থানেও মৃত্যু হয়েছে দু’জন শিশুর। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে একটি নির্দিষ্ট কাশির সিরাপের বিরুদ্ধে, যার নাম ‘কোল্ডরিলিফ’। শিশুরা এই সিরাপ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শারীরিক অসুস্থতা বোধ করে। পরে কিডনি বিকল হয়ে একে একে মৃত্যু হয় একাধিক শিশুর। ছিন্দওয়ারা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ পবন নন্দুরকরের কথায়, প্রাথমিকভাবে সাতটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল, পরে সংখ্যাটি বেড়ে ৯ জন দাঁড়ায়। সব ক্ষেত্রেই সিরাপের ব্যবহার ও মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত পরীক্ষাগারে সিরাপের নমুনায় কোনও বিষাক্ত রাসায়নিক, যেমন DEG (Diethylene Glycol) বা EG (Ethylene Glycol), মেলেনি। যদিও তদন্ত এখনও চলছে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এবং শিশুদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে কাশি বা সর্দি স্বাভাবিক সমস্যা, যা অনেক সময় চিকিৎসা ছাড়াও সেরে যায়। কিন্তু এই ভাবে ওষুধ প্রয়োগ মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ফলে, স্বাস্থ্য দফতর ও চিকিৎসকর মহলের মতে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওভাবেই শিশুকে কাশির সিরাপ বা ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়। এই ঘটনার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রক শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হতে সমস্ত রাজ্যকে সতর্ক করেছে। পাশাপাশি, সিরাপ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর মান যাচাই ও বাজারে থাকা সিরাপের ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।


