ভোট দিতে গিয়েছেন এক ব্যক্তি। বুথে বসা পোলিং এজেন্টকে বাবার নাম বলে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি ভোট দিয়ে গিয়েছেন কি না। গম্ভীর মুখে লিস্ট দেখে পোলিং এজেন্ট জানিয়ে দিলেন, ঘণ্টাখানেক আগে ভোট দিয়ে চলে গিয়েছেন তাঁর বাবা। শুনে মাথায় হাত ওই ব্যক্তির। বললেন, ‘ইস, ঘণ্টাখানেক আগে এলেই দেখা হয়ে যেত বাবার সঙ্গে।’ সেকথা শুনে কৌতূহলবশত পোলিং এজেন্ট জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন, আপনারা একসঙ্গে থাকেন না?’ জবাবে ওই ব্যক্তি জানালেন, বাবা মারা গিয়েছেন সাত বছর আগে। ভোটের বাজারে এমন রসিকতা বেশ প্রচলিত। তবে মৃত ব্যক্তির ভোটদান, কোনও একটি নির্দিষ্ট নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ড তৈরি বা তালিকায় ভুয়ো ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা চলতেই থাকে। সেই বিতর্কে রাশ টানতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। খুব শীঘ্রই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মৃত্যু নথিভুক্তিকরণের তথ্য পাবে নির্বাচন কমিশন। ফলে ভোটার লিস্টে মৃত ভোটারের নাম থেকে যাওয়া নিয়ে যে অভিযোগ ওঠে, তা আর থাকবে না। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবার থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (আরজিআই) থেকে নিয়মিত মৃত্যু নথিভুক্তিকরণের তথ্য সংগ্রহ করবে কমিশন। এই পদ্ধতিতে রাজ্যের ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা (ইআরও) নিয়মিতভাবে নিজের নিজের এলাকায় নথিভুক্ত হওয়া মৃত্যুর তথ্য পাবেন। সেই নথি হাতে আসার পর বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) এলাকায় গিয়ে সেই তথ্য যাচাই করে তালিকা থেকে নাম বাদ দেবেন। ফলে মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারের তরফে ফর্ম-৭ জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও অনুরোধের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়বে না কমিশনের। কোনও ভোটারের মৃত্যুর তথ্য হাতে আসার পরেই বিএলওরা ওই ভোটারের বাড়িতে যাবেন তথ্য যাচাইয়ের জন্য। সেখানেই তাঁরা পরিবারকে দিয়ে ফর্ম-৭ পূরণও করিয়ে নেবেন। এর মধ্যে দিয়ে ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল হবে বলে মত রাজনীতিবিদদের। তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের সুবিধার জন্য ভোটার ইনফরমেশন স্লিপের (ভিআইএস) নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এবার থেকে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর ও পার্ট নম্বর আরও বড় করে ছাপা হবে। এছাড়াও বুথ লেভেল অফিসারদের জন্য ছবি সহ নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ভোটাররা যাতে সহজে বিএলওদের চিনতে পারেন ও ভোটার তালিকা যাচাইয়ের সময় প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে গোপনে কথা বলতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। এর ফলে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ মান্যতা পেল বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের।
