দেশ

সুপ্রিমকোর্টে বেআইনি ঘোষণার পরও বেপরোয়া মোদি সরকার, নয়া আয়কর আইনে নির্বাচনী বন্ড ফেরাচ্ছে কেন্দ্র!

 আবার ফিরবে ইলেক্টরাল বন্ড! ঘুরপথে অন্য কোনও মোড়কে? সদ্য সংসদে পেশ হওয়া নতুন আয়কর আইনের ৮ নম্বর ধারায় নির্বাচনী বন্ডের উল্লেখ ও রাজনৈতিক পার্টিকে চাঁদা সংক্রান্ত বিধির বিবরণ থাকায় এই জল্পনা তৈরি হয়েছে। কয়েকটি মহলের বক্তব্য, নতুন আয়কর আইনে কমবেশি পুরনো আইনের প্রাসঙ্গিক প্রতিটি ধারা ও বিধিই রয়েছে। শুধুমাত্র যে ধারা ও বিধির প্রাসঙ্গিকতা বিলুপ্ত, সেগুলি মুছে দিয়ে আরও সরল একটি রূপ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আয়কর আইনের অন্তর্ভুক্ত যে ধারায় নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিষয়টি ছিল, সেটা অবিকল রয়ে গিয়েছে। আর তা সরকারের জ্ঞানত হতে পারে, অজ্ঞাতেও হতে পারে। পক্ষান্তরে অন্য একটি মহলের ধারণা, এই ধারা ইচ্ছাকৃতভাবেই রাখা হয়েছে। তার কারণ কী? আগামী দিনে আবার ভিন্ন কোনও পন্থায় হলেও চেনা এবং অচেনা কর্পোরেট থেকে অর্থ সংগ্রহের রাস্তা খুলে রাখা।  ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছ হিসেবে পর্যবসিত করার লক্ষ্যেই নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা আনা হয়েছিল বলে মোদি সরকারের দাবি। কিন্তু দেখা গিয়েছে, ওই বন্ড আদতে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার থেকে টাকা আদায়ের একটি অস্ত্র মাত্র। সরকারে বিজেপি। তাই দেশের সব রাজ্য থেকে সবথেকে বেশি বন্ড ইস্যু হয়েছে বিজেপির নামেই। ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট মোদি সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকেও চরম ধাক্কা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, ইলেক্টরাল বন্ড নামক এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, আর কোনও বন্ড ইস্যু করা যাবে না। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়সীমায় বন্ড বাবদ সর্বাধিক আয় কিন্তু হয়েছে বিজেপিরই—৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সেই কারণেই কি সুপ্রিম নির্দেশ সত্ত্বেও ঘুরপথে আইনের মাধ্যমে বন্ড ফেরাতে চায় সরকার? নতুন আয়কর আইন এখনও সংসদে পাশ হয়নি। পেশ হয়েছে মাত্র। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পর্যালোচনার পর আসবে আবার সংসদে। কিন্তু তার মধ্যেই এমন বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে বিজেপির মোট প্রকাশ্য আয় দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা অন্য ছ’টি জাতীয় রাজনৈতিক দলের মোট আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ! নজর করার মতো বিষয় হল, বিজেপি ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা আয় করলেও ব্যয় করেছে তার ৫০ শতাংশ—২ হাজার ২১১ কোটি টাকা।  ১৯৬১ সালের বর্তমান আয়কর আ‌ইন অনুযায়ী, এরকম কোনও ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল অর্থসাহায্য পেলে সেটি করছাড়ের উপযুক্ত। মোদি সরকারের দাবি, নতুন আয়কর আইনকে পুরনো বহু অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায্য ফাঁস থেকে মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ৬২২ পৃষ্ঠার নতুন প্রস্তাবিত আয়কর আইনের ৮ নম্বর ধারায় রাখা‌ হয়েছে কর্পোরেট চাঁদা তথা নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিধি। যা হবে আয়করমুক্ত! অর্থাৎ, নতুন আইনেও নির্বাচনী বন্ড অথবা সেই ধরনের কোনও পন্থায় ‘চাঁদা’ পেলে সেই অঙ্কের উপর আয়কর দিতে হবে না সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে। কেন? আবার বিতর্কিত বন্ড ফেরাতে?