কলকাতা

জাতীয় শিক্ষানীতি হুবহু মানবে না রাজ্য সরকার, প্রকাশিত হল গেজেট বিজ্ঞপ্তি

জাতীয় শিক্ষা নীতি নয়, রাজ্য তৈরি করল নিজস্ব শিক্ষা নীতি

জাতীয় শিক্ষানীতি মানছে না রাজ্য। শনিবার রাজ্যের তরফে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে নয়া এই গেজেটে প্রকাশিত রাজ্য শিক্ষানীতি মানা হবে এখন থেকে। শনিবার রাজ্যের তরফে ১৭৫ পাতার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রের পাল্টা নিজস্ব শিক্ষা নীতি তৈরি করার জন্য ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল রাজ্য সরকার। নয়া এই রাজ্য শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়নি। বলা হয়েছে, এক বছরের প্রি-প্রাইমারি ক্লাস এবং চার বছরের প্রাথমিকের ক্লাস হবে। তারপর পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পর মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। মাধ্যমিকের পর একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস শেষ উচ্চমাধ্যমিক দেবেন ছাত্রছাত্রীরা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে সেমেস্টার এবং এমসিকিউ পদ্ধতিতে। জোর দেওয়া হয়েছে বাংলা ভাষার ওপরে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব মাধ্যমের পড়ুয়াদের বাংলা ভাষার ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে রাজ্যের তরফে। অষ্টম শ্রেণী থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে সেমিস্টার পদ্ধতি। গ্রামে শিক্ষার ওপর জোর দিতে প্রয়োজন মত শিক্ষকদের বদলি করা হবে গ্রামে। শিক্ষক নিয়োগের সময় এই বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে। প্রত্যেক স্কুলে এবার থেকে অনুষ্ঠিত হবে গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি। হুবহু মিল না থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি অবলম্বন করেছে রাজ্য। চালু করা হয়েছে চার বছরের অনার্স কোর্স। ধাপে ধাপে বদলাবে পড়াশোনার পদ্ধতি।

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানীতিকেই নতুন করে সাজালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করার কোনও পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেই। বিধানসভাতেও এই অবস্থান সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। তখনই তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, বাংলায় নতুন করে শিক্ষানীতি গড়ে তোলা হবে। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর, শনিবার, ১৭৮ পাতার শিক্ষানীতি প্রকাশ করল রাজ্য। আজ থেকেই এই নির্দেশিকা কার্যকর হতে চলেছে। একেবারে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বদল আনা হয়েছে। নতুন প্রবর্তিত নীতিতে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা, উচ্চশিক্ষায় একাধিক বদল আসছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, স্কুলস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রথম ২ বছর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়াশোনায় জোর দেওয়া হয়েছে নয়া শিক্ষা নীতিতে। বঙ্গে ত্রি-ভাষা নীতি গৃহীত হচ্ছে। অর্থাৎ, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট তিনটি ভাষা পড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে রাজ্যের নয়া শিক্ষা নীতি। ছাত্রছাত্রীদের মাতৃভাষা পড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকেই বাংলা ভাষা সম্পর্কে পড়ুয়াদের ধারণা তৈরি করতে হবে, শিক্ষা নীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে। নয়া নীতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কর্মজীবনের পাঁচ বছর অন্তত গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকতা করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য আসছে নয়া ‘প্রমোশন নীতি’। নতুন শিক্ষানীতিতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এমসিকিউ (MCQ) ধরনের প্রশ্ন থেকে সেমিস্টার পদ্ধতি সহ একাধিক বদল আসবে। রাজ্যের শিক্ষা নীতিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চতর ক্লাস পর্যন্ত সেমেস্টার পদ্ধতি চালু করা হবে।আগামী তিন বছরের মধ্যেই ধাপে ধাপে এই সেমেস্টার প্রক্রিয়া কার্যকর করার নির্দেশ রয়েছে। নয়া শিক্ষানীতি ২০৩৫ সালের মধ্যে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নততর জায়গায় নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা।