বিবিধ

ভ্যালেন্টাইনস ডে-র ইতিহাস

ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা এবং অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত হয়। দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে। ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনস নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। সেই সময় সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের বিয়ে করাকে আইন বহির্ভূত বলে ঘোষণা করেন । তিনি মনে করতেন, যাদের স্ত্রী ও সংসার আছে তাদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষরা অধিকতর উন্নত যোদ্ধা হতে পারেন । কিন্তু সেন্ট ভ্যালেনটাইন অনুভব করলেন এটি অন্যায়, তাই তিনি নিয়ম ভাঙ্গেন এবং গোপনে অবিবাহিত পুরুষদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ক্লডিয়াস যখন জানতে পারলেন, তখন তিনি সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন । সেখানে, তিনি বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারা রক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। কারাঅধ্যক্ষের এক সুন্দরী তরুনী কন্যা ছিল যার প্রেমে পড়ে যান এবং সে কারাভ্যন্তরেই তারা দেখা করতেন ।সম্রাট যখন তাদের সম্পর্কে জানতে পারেন তখন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেন । ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি যখন ভ্যালেন্টাইনকে হত্যা করা হয় তখন তিনি তার প্রেমিকাকে “ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন (from your Valentine)” লিখে সর্বশেষ একটি প্রেমপত্র পাঠিয়েছিলেন ।মূলত ভ্যালেন্টাইনের বীরোচিত ভালোবাসার এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেই এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে,  বা সেন্ট  ভ্যালেন্টাইনস ডে বলা হয়। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইনস স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে  ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সে দেশের আদালত।

বর্তমানকালে ভ্যালেন্টাইনস ডে

বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। প্রত্যেক বছর ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসাবে পালন করা হয়। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে হলেও পুরো সপ্তাহটাই  ভালোবাসার কোনও না কোনও দিন হিসেবে পালন করা হয়। আর এই গোটা সপ্তাহকেই বলা হয় ভ্যালেন্টাইনস উইক। এই সাতদিনে নানান ভাবে নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করেন সবাই।

🔴রোজ ডে (৭ ফেব্রুয়ারি)- এই দিনটি থেকেই শুরু হয় ভ্যালেন্টাইস উইক। এই দিনে প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে লাল গোলাপ ফুল দেন। বন্ধুরা একে অপরকে হলুদ রঙের গোলাপ দেন।

🔴 প্রোপোজ ডে (৮ ফেব্রুয়ারি)- রোজ ডে-র পরের দিনটিই হয় প্রোপোজ ডে। ভ্যালেন্টাইনস সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে প্রোপোজ করেন। নিজেদের ভালোবাসার প্রকাশ করেন একে অপরের সামনে। এবছর প্রপোজ ডে মঙ্গলবারে।

🔴 চকোলেট ডে (৯ ফেব্রুয়ারি)- এদিন সেলিব্রেট করা হয় চকোলেট ডে। রোজ ডেতে একে অপরকে গোলাপ ফুল দিয়ে আর প্রপোজ ডে তে একে অপরের ভালোবাসার প্রকাশ হওয়ার পর প্রেমিক প্রেমিকা ৯ই ফেব্রুয়ারি একে অপরকে চকলেট দিয়ে নিজের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। গুচ্ছের চকোলেট নিয়ে হাজির হয়ে যান পার্টনারের কাছে। আর যদি আপনি চকোলেট বানাতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। নিজের বানানো চকোলেট নিয়েই চমকে দিন তাকে।

🔴 টেডি ডে (১০ ফেব্রুয়ারি)- টেডি ডেতে একে অপরকে তারা উপহার হিসেবে টেডি দেন। এই বিশেষ দিনটির জন্য বাজারে বিভিন্ন রকমের টেডি বিয়ার্স পাওয়া যায়।

🔴 প্রমিস ডে (১১ ফেব্রুয়ারি)- এই দিনই তো প্রতিজ্ঞা করার দিন। গোলাপ, প্রপোজ, চকলেট এবং টেডি ডে র পরে আসে প্রমিস ডে। এই দিন প্রেমিক এবং প্রেমিকা সারা জীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন।

🔴 হাগ ডে (১২ ফেব্রুয়ারি)- প্রতিজ্ঞা করবেন আর একবার আলিঙ্গন করবেন না? তাও কি হয়? তাই তার জন্যও ধরা আছে একটি দিন। ১২ ফেব্রুয়ারি, হাগ ডে। কষে আলিঙ্গন করার দিন।

🔴 কিস ডে (১৩ ফেব্রুয়ারি)- ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র ঠিক আগের দিন। ঠোঁটে ঠোঁট রাখার দিন। কিস ডে-র দিন প্রেমিক যুগল একে অপরের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটান চুম্বনের মাধ্যমে। এবারে এই দিনটি রবিবার পড়েছে।

🔴 ভ্যালেন্টাইন্স ডে (১৪ ফেব্রুয়ারি)- এবার কাউন্টডাউন শেষ। ভ্যালেন্টাইনস সপ্তাহের শেষ দিন হল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে পালন করা হয় এই দিনটিকে। প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের সঙ্গে বিশেষ ডিনার ডেট প্ল্যান করেন, ঘুরে বেড়ান। যেভাবে পারবেন একে অপরের সঙ্গে সময় উপভোগ করুন। এবছর ভ্যালেন্টাইনস ডে সোমবার।