জেলা

নাগেরবাজারের ফ্ল্যাটে মাথার খুলি-হাড়গোড়, ধৃত জ্যোতিষী সহ ৩

ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে কাপড়ের পুতুল। তার গায়ে পিন ফুটিয়ে সাঁটা হয়েছে বিভিন্ন জনের ছবি! ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মানুষের মাথার খুলি। এই ফ্ল্যাটই ছিল তার তন্ত্রসাধনার ‘ক্ষেত্র’। বুধবার রাতে নাগেরবাজার থানার আমবাগান এলাকার এম এন সাহা রোডে ওই ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে বড়সড় সাফল্য পেল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বনদপ্তর। তন্ত্রসাধনার ঘর থেকেই উদ্ধার হল বাঘের দাঁত, সজারুর খুলি, হরিণের সিং, চামড়া সহ বন্যপ্রাণের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এমনকী, এই ফ্ল্যাট থেকে মানুষের পাঁচটি খুলিও পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বনদপ্তর। তন্ত্রসাধনার জন্য তারা বন্যপ্রাণের শরীরের অংশ বিশেষ নিয়ে এসেছিল, নাকি তন্ত্রসাধনার আড়ালে বন্যপ্রাণ পাচার চক্র গড়ে তুলেছিল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত এবং বারাকপুর রেঞ্জ অফিসের পক্ষ থেকে বুধবার রাতে এই অভিযান চালায় বনদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ডিএফও রাজু সরকার। এই ফ্ল্যাট থেকে এক মিটার লম্বা স্পটেড হরিণের একটি চামড়া, হরিণের শিং, সজারুর মাথার খুলি, সজারুর কাঁটা, বাঘের দাঁত এবং মানুষের পাঁচটি খুলি উদ্ধার হয়েছে। এমনকী, পাখির কঙ্কালও পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে রাখাল চৌধুরী ও অরিজিৎ গুপ্তা নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাখালের শিষ্য ছিল অরিজিৎ। সে রাখালের ফ্ল্যাটেই থাকত। রাখাল নিজের গলায় পরে থাকত বাঘের দাঁত।তাদের জেরা করে বনদপ্তর জানতে পারে, ওই ফ্ল্যাটের পাশেই দুলাল অধিকারী নামে আরও একজনের বাড়িতে বন্যপ্রাণের দেহাংশ রয়েছে। দুলালও রাখালের শিষ্য। ওই বাড়ি থেকে হরিণের আরও একটি চামড়া এবং পাঁচটি নখ-দাঁত জাতীয় জিনিস উদ্ধার হয়েছে। বনদপ্তরের দাবি, ওই পাঁচটি নখ বাঘের হতে পারে, আর দাঁতগুলি বুনো শুয়োরের দাঁতও হতে পারে। এরপর দুলালকেও গ্রেপ্তার করা হয়। মানুষের পাঁচটি খুলি নাগেরবাজার থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিস অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।রাখালচন্দ্র চৌধুরী সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৭২’-এ তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। রাখালের ছেলেও এই চক্রের অন্যতম পান্ডা বলে তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি। সে অবশ্য অভিযানের আগেই পালিয়ে যায়। তার খোঁজ চলছে।