ভারত যা বলেছিল তাই করে দেখাল। মঙ্গলবার মধ্যরাতেই ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাফল্যের কথা জানানো হয় ভারতীয় সেনার তরফে। এরপর আজ সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে সাংবাদিক বৈঠকে বসে সেনা। উপস্থিত ছিলেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। সেনার তরফে হাজির থাকা, দুই প্রতিনিধির মধ্যে একজন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও অন্যজন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১৫ দিন পর, মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে ভারত। ভারত এর নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানের ভিতরে ৪টি এবং পিওকে-তে ৫টি জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত ৷ পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে মাসুদ আজহারের আস্তানা সহ মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ভারত । এদিকে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে যে, ভারত পাকিস্তানের কোটলি, বাহাওয়ালপুর এবং মুজাফ্ফরাবাদে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেছে ৷ অন্যদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে বলেছে যে, আমাদের পদক্ষেপ শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে করা হয়েছে। এদিন সংবাদ মাধ্যমকে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানান, ৯টি জঙ্গি ক্যাম্পকে টার্গেট করা হয়েছিল ৷ এবং সম্পূর্ণ রূপে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ ৯ দশক ধরে

পাকিস্তান জঙ্গিদের এই মডিউল গড়ে তুলেছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাম্পগুলি জঙ্গিদের লঞ্চ প্যাড হিসাবে ব্য়বহার করা হয়েছে ৷ নির্দিষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই হামলা চালানো হয়েছে ৷ তবে কোনও সাধারণ নাগরিকের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা-ও দেখা হয়েছে ৷ সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, ‘মুম্বইয়ের পর পহেলগাঁওয়ের হামলা ভারতের বুকে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। এই হামলায় পরিবারের সামনেই পুরুষদের মাথায় গুলি করা হয়েছে। জঙ্গি সংগঠন টিআরএফ হামলার দায় স্বীকার করেছে। জৈশ, লস্করেরা এই ধরনের সংগঠনের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যকলাপ করে চলেছে। তার বিরুদ্ধই ভারতের এই জবাব।’ একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘ গত ২৫ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করে ন্যাবিচারের পক্ষে সওয়াল করেছিল। ভারত সেই ন্যায় বিচারের ভিত্তিতেই এই প্রত্যাঘাত করল। অন্যদিকে, ভারতীয় সেনার এই প্রত্যাঘাতের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করেছেন, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও অন্যজন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। তাঁরা জানান, এই পাল্টা জবাবের

মাধ্যমে পাকিস্তানের মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়েছিল। সেগুলি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও সাধারণ নাগরিকের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র বেছে বেছে নির্দিষ্ট বিল্ডিংগুলিকেই নিশানা করা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনা ঘাঁটিতেও হামলা করা হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, পাকিস্তানের মধ্যে যে কটি জঙ্গি ঘাঁটি ওড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে শিয়ালকোটের সার্জাল ক্যাম্প, মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প। এই ক্যাম্পগুলি পরিচালনা করা হত হিজবুলের তরফে। ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে বেছে এগুলিকে নিশানা করে। এছাড়াও, পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও একাধিক জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়। এই ক্যাম্পগুলি মূলত জইশ ও লস্কর-ই-তইবার ঘাঁটি ছিল। এদিন অপারেশন ‘সিন্দুর’-এর মাধ্যমে এই ঘাঁটিগুলিকেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পহেলগাঁওয়ে মহিলাদের সামনেই স্বামীকে হত্যা করে যেভাবে তাঁদের সিঁথির সিঁদুরের উপর আঘাত করা হয়েছিল। তার বদলা নিতেই ‘অপারেশন সিন্দুর’ লঞ্চ করে ভারত। আর সেই কারণেই সাংবাদিক বৈঠকেও রাখা হয়েছিল দুই মহিলাকে সেনানিকেই।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ঠিক কী কী হল…
রাত ১টা – প্রস্তুতি শুরু হয় ভারতের সামরিক অভিযানের। স্থল, নৌ এবং বায়ু সেনা যৌথভাবে হামলা ছক করতে শুরু করে পাকিস্তানে।
রাত ১টা ৩০ মিনিট – পাকিস্তানের মুজফরাবাদে ব্ল্যাকআউট। পাহাড়ি এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের প্রত্যাঘাতের খবর সামনে আসে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু।
রাত ১টা ৫১ মিনিট – পাকিস্তানের কোটলি, বাহওয়ালপুর ও মুজফফরাবাদে বিস্ফোরণের শব্দ। ভারতীয় সেনার তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় পহেলগাম হামলার বদলা নেওয়া হয়েছে।
রাত ২টো ৪৬ মিনিট – ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বার্তা দেন।
ভোর সাড় ৪টে মিনিট – পাকিস্তানের একের পর এক বিমান বাতিল।
ভোর ৫টা ৫ মিনিট – পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গিঘাঁটি আক্রমণের খবর সামনে আসে।
সকাল ৬টা – ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পূর্ণ করার পর ভারতীয় সেনা নিরাপদে বেস ক্যাম্পে ফিরে আসে।

