জেলা

টানা ৬৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশির পর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার জীবনকৃষ্ণ সাহা 

 টানা ৬৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশির পর অবশেষে ভোররাতে গ্রেপ্তার বড়ঞার এমএলএ জীবনকৃষ্ণ সাহা! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের জালে তৃণমূল কংগ্রেসের আরও এক বিধায়ক। সোমবারই তাঁকে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্ত জীবনকৃষ্ণবাবুকে আদালতেও পেশ করে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তাদের অভিযোগ, অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছেন এই বিধায়ক। তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে তদন্তকারীদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে বাইরে ছুড়ে ফেলেছেন। শুনানি শেষে তাঁকে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আন্দি গ্রামে জীবনকৃষ্ণবাবুর বাড়িতে হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। দুপুর থেকে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। সেই সঙ্গে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রচুর নথি ও পেন ড্রাইভ উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। এই পর্বেই সিবিআই অফিসারদের হাত থেকে নিজের স্মার্টফোন দু’টি ছিনিয়ে নিয়ে পাশের পুকুরে ফেলে দেন বিধায়ক। সেগুলি খুঁজতে পুকুরের জল সেঁচে পে লোডার দিয়ে মাটি কাটতে হয়। নামানো হয় স্থানীয় মৎস্যজীবী এবং শ্রমিকদের। রবিবার সকালে পুকুর থেকে উদ্ধার হয় একটি স্মার্টফোন। পরে তার দু’হাত দূরেই দ্বিতীয়টি খুঁজে পান এক শ্রমিক। সেটি কাদার খুব গভীরে ছিল না। প্লাস্টিকের প্যাকেটে থাকায় ফোনটির তেমন ক্ষতিও হয়নি বলে খবর। বিধায়কের বা঩ড়ির পাশের বাগান থেকে পাঁচটি ব্যাগভর্তি নিয়োগ সংক্রান্ত নথিও উদ্ধার করে সিবিআই। এরপরই লেনদেনের তথ্য, প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। উত্তরে অবশ্য তিনি সুপারিশের কথা স্বীকার করে নেন বলে সূত্রের খবর। তাঁর দাবি, বিধায়ক হিসেবে কারও নামে সুপারিশ করাটা বেআইনি নয়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে কাউকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁকে জেরা করতে রাত আড়াইটে নাগাদ কলকাতা থেকে শীর্ষ কর্তারা এসে হাজির হন আন্দি গ্রামে। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। তারপরই এদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ জীবনকৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। বেলা ১১টা নাগাদ নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। তারপর দুপুরের খাবার খাইয়ে পেশ করা হয় আলিপুর জজ কোর্টে।
তদন্তে উঠে এসেছে, উত্তরবঙ্গে বেআইনি নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করতেন জীবনকৃষ্ণ। প্রার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেও দিতেন। এজেন্সির দাবি, লেনদেনের নথি ও হিসেবের তালিকা মিলেছে। আদালতে জীবনকৃষ্ণবাবুর আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পাল্টা সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, চার্জশিটে নাম থাকা জেলবন্দি প্রসন্নকে জেরা করে জীবনকৃষ্ণের নাম মেলে। তাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নথি উদ্ধার হয়েছে। ওএমআর শিট বিকৃত করে, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি।