দেশ

উত্তরাখণ্ডে বসে যাচ্ছে গোটা যোশীমঠ

একের পর এক বাড়িতে বিশাল আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে যোশীমঠে। উত্তরাখণ্ডের এই শহরে ৫৬১টি বাড়ি ক্রমশ বসে যাচ্ছে। এর ফলে বহু মানুষ ঘর হারাতে পারেন, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে কয়েক হাজার মানুষ।  পাথুরে জমিতে একের পর এক ফাটল দিয়ে উঠে আসছে জল! গৃহহীন কয়েক হাজার মানুষ। সংকটে গোটা একটা জনপদের অস্তিত্ব! কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল উত্তথণ্ডের যোশীমঠে? এক-দুই বছর নয়! ৪৭ বছর আগেই যোশীমঠ নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে , হুঁশ ফেরেনি কারও! ২০১৩ সালের হিমালয়ান সুনামির পর আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। বাবা বদ্রীনাথের শীতকালীন আবাস এই জনপদ। ভারত-চিন সীমান্তের কাছে উত্তরাখণ্ডের এই ছোট্ট শহর সেনা বাহিনীর কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  বিষ্ণুপ্রয়াগ থেকে প্রবাহিত একটি জলস্রোতকেও পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। জলের স্রোত যোশীমঠের মাটি আলগা করে দিয়েছে বলে দাবি। পাহাড় থেকে একাধিক নালা মাটির তলা দিয়ে গিয়ে ধৌলিগঙ্গা বা অলকানন্দায় মেশে। যোশীমঠ শহরের নিকাশী ব্যবস্থাও যথাযথ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যোশীমঠ এলাকায় একাধিক নালা ২০১৩ সালের হিমালয়ান সুনামিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ঋষিগঙ্গার বন্যায়। ২০২১ সালেও প্রবল বৃষ্টি হয় এই এলাকায়। যার নিট ফল জলপ্রবাহের ধাক্কায় একটু একটু করে ক্ষয়ে গিয়েছে যোশীমঠের মাটি। দূর্বল হয়েছে পাহাড়। আর সেই সমস্যাকে উপেক্ষা করেই চলেছে নির্মাণের কাজ। ১৯৭৬ সালেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, যোশী মঠ একদিন ডুবে যেতে পারে। সরকার নিযুক্ত মিশ্র কমিশনের রিপোর্টেই বিপদ সংকেত দেওয়া হয়। হিমালয়ের ভূমিধসের উপর গড়ে ওঠা জনপদের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় রিপোর্টে। গত কয়েক বছরে বারবার যোশীমঠের বিপদের কথা শুনিয়েছেন ভূতাত্ত্বিকরা। যোশীমঠের মাটির ভারবহন ক্ষমতা সেই কারণেই কম। প্রকৃতির ক্ষমতার তোয়াক্কা না করেই ছোট্ট জনপদ যোশীমঠ হয়ে উঠেছে শহর। পাহাড়ের গায়ে বাড়ি, হোটেল তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বেপরোয়া নির্মাণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, এবং জাতীয় সড়ক প্রসস্ত করার কাজে আরও চাপ বেড়েছে প্রকৃতির উপর। উন্নয়নের নেশায় মত্ত মানুষ খেয়ালই করেনি কখন প্রকৃতির সহ্যের বাঁধ ভেঙেছে! ফলে যেকোনও মুহূর্তে রয়েছে বড় বিপদের আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই বহু বাসিন্দা আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। চামোলিতে কৃত্রিম আশ্রয়স্থল খোলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এদিকে, উত্তরাখণ্ডের একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।