বদলা এখনই? ভারত সরকার স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাউকে রেয়াত করা হবে না। পাল্টা হানা হবে… যে কোনও সময়। আর তা সময়ের অপেক্ষা। বুধবার দিনভর ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে, তার যোগফল হল, আবার সম্ভবত হতে চলেছে পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার পদক্ষেপ। আরও একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? বালাকোটের স্টাইলে? নাকি সীমান্ত পেরিয়ে আঘাত হানার কোনও হট পারস্যুট? এখনই সেটা জানা যাচ্ছে না। তবে সেরকম কিছুর আশঙ্কা করছে খোদ পাকিস্তান। তাই বুধবার সকাল থেকেই ইসলামাবাদ সর্বত্র হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। লাহোর এবং করাচি এয়ারবেসে দিনভর চক্কর কেটেছে পাকিস্তান এয়ারফোর্স। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সাফ বলেছেন, ‘অপরাধীরা ছাড় পাবে না। শুধুই যারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তারা নয়, তাদের পিছনে যে মাথারা আছে, তাদেরও টার্গেট করা হবে।’ রাজনাথ সিংয়ের তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত, দোষীদের এবং তাদের চালিকাশক্তিকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে। এবার শিক্ষা দেওয়ার পালা। এই ঘটনার পর বদলা চাইছে গোটা দেশ। ইতিমধ্যে সিন্ধু চুক্তি বাতিল, আটারি সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের মতো একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। এইসঙ্গে বুধবার মধ্যরাতেই ভারতে নিযুক্ত পাক কুটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারিচকে সমন পাঠায় সাউথ ব্লক। দিল্লির তরফে স্পষ্ট করা হয়, সাধারণ নাগরিক থেকে কূটনীতিক-ভারতে পাকিস্তানি মাত্রই ‘অবাঞ্ছিত’। এএনআই সূত্রে খবর, পাক কূটনীতিককে তলব করে নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা সে দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা, বায়ু উপদেষ্টাকে দেশে ফিরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক বার্তা দিয়েছে। সরকারি নির্দেশনামা আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে সাদ আহমেদ ওয়ারিচের হাতে। ভারতে তাঁদের উপস্থিতি যে কাম্য নয়, বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের উপর হামলার পরেই বৈঠকে বসে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এই বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ছিলেন এই বৈঠকে। দীর্ঘ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। সেখানেই তিনি জানান, পহেলগাম হামলার তীব্র প্রতিবাদ করে ভারত বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মিসরি জানান, এই মুহূর্ত থেকে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করা হল। যতদিন না পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্ত সন্ত্রাস থামাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই চুক্তি কার্যকর থাকবে না। এছাড়াও অবিলম্বে বন্ধ করা হবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। বৈধ কারণে যাঁরা ওই পথ দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ১মে’র মধ্যে ভারতে ফিরতে হবে। আগামী দিনে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করল ভারত। বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। এছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান-দুই দেশের হাই কমিশন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হবে সামরিক পরামর্শদাতাদের। পাক হাইকমিশনের এই পদগুলি ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ বলে ঘোষণা করল নয়াদিল্লি।
