পরনে কালো কুর্তা-পাজামা। উপরে চাপানো হাফ জ্যাকেটের বোতাম খোলা। বাঁ কানে ধরা মোবাইল ফোন। আর ডান হাতে সুবিশাল একটা কেকের বাক্স। মোবাইলে কথা বলতে বলতেই হনহন করে এগিয়ে আসছিলেন মধ্যবয়সি যুবক। মুহূর্তে সংবাদমাধ্যম ঘিরে ধরল তাঁকে। উড়ে এল প্রশ্নবাণ। ‘এখানে কেকের অর্ডার কে দিয়েছে?’ ‘কেন কেক যাচ্ছে ভিতরে?’ তিনি অবশ্য নিরুত্তর। হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে প্রায় ছুটেই ঢুকে গেলেন ভিতরে। বৃহস্পতিবার একটি কেকের বাক্সকে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক কেন? কারণ যে সরকারি ভবনে তিনি কেক হাতে ঢুকলেন, তার ঠিকানা ২/৫০-জি, শান্তিপথ, রামনগর, চাণক্যপুরী, নিউদিল্লি। দিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাই কমিশনের কার্যালয়। দু’দিন আগেই কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নিরস্ত্র, নিরপরাধ পর্যটকদের উপর ঘৃণ্য প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি জঙ্গিরা। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলেছে ২৮ জনকে। বদলার দাবিতে ফুঁসছে গোটা দেশ। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিচ্ছে, তখন দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে কেন ঢুকছে কেক? পহেলগাঁওয়ের সেলিব্রেশন! তুঙ্গে উঠেছে চর্চা। ওই মধ্যবয়সি যুবকের পরিচয় অন্তত এদিন রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। ফলে ‘রহস্যময়’ ব্যক্তি এবং তাঁর হাতে ধরা কেকের বাক্স নিয়ে জল্পনা থামছে না। বুধবার রাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কমিটি পাকিস্তানের উপর একাধিক কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে। বিশেষ করে শান্তিপথে পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে প্রচুর পুলিস বাহিনী এবং আধাসেনা। এই পরিস্থিতিতে কীসের সেলিব্রেশন? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। আর তার অভিঘাত ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের মতো। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং গেরুয়া শিবিরের সংগঠন অ্যান্টি-টেরর ফোরাম। বিজেপি নেতা হর্ষ বর্ধন, সতীশ উপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সচদেবা সহ অন্যান্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে স্লোগান ওঠে ‘পাকিস্তান হায় হায়’। ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’, ‘আতঙ্কবাদ কে আগে নেহি ঝুকেঙ্গে’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দেখানো হয় বিক্ষোভ। শান্তিপথে আচমকাই প্রতিবাদ অবস্থান করে অন্য একটি সংগঠন। যদিও দিল্লি পুলিস দু’পক্ষকেই সরিয়ে নিয়ে যায়। ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড থাকলেও পরে তা সরিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। আঁটসাঁট নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্য ছিল পুরোমাত্রায়। এদিন পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে গিয়ে টের পাওয়া যায়, চাপা টেনশনের আবহ ছড়িয়ে রয়েছে। অন্তত বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে, হাই কমিশন চত্বর কার্যত শুনশান। গুজরাতের চারজন বাসিন্দা অটোয় চেপে এসেছেন। তাঁদের ভিসা প্রয়োজন। জরুরি প্রয়োজনে পাকিস্তান যেতে হবে। দিল্লি পুলিস মূল গেট দিয়ে ঢুকতে দিল না। বলা হল, ‘পিছনের গেট দিয়ে যান।’ ‘কী নাম?’ ‘পাকিস্তানের কোথায় যাবেন?’ উত্তর না দিয়ে মুহূর্তেই অটোয় চেপে বসলেন প্রত্যেকে। টেনশন তো থাকলই। জিইয়ে রইল রহস্যও।
