বায়ুসেনা ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে হুঙ্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, অপারেশন সিঁদুর একটা পরিষ্কার ‘লক্ষ্ণণ রেখা’ টেনে দিয়েছে ৷ এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদি ৷ মঙ্গলবার সকালে তিনি পৌঁছন আদমপুরের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ৷ তাঁর মাথায় ছিল ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ডের ক্যাপ ৷ তাতে সুতো দিয়ে ত্রিশূল চিহ্ন আঁকা ছিল ৷ বায়ুসেনার জওয়ানদের সাক্ষী রেখে পাকিস্তানকে ফের সতর্ক করলেন তিনি ৷ ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ এয়ারবেসটিকে নিশানা করেছিল পাকিস্তান ৷ গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে যে কথাগুলি বলেছিলেন, এদিনও তারই পুনরাবৃত্তি হল ৷ তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, সেই আদমপুর এয়ারবেস থেকে 100 কিমি দূরেই পাক-সীমান্ত ৷ অপারেশন সিঁদুর-এর পর ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রত্যাঘাত করেছিল পাক সেনা ৷ শরিফ সরকার দাবি করেছিল, তারা আদমপুর সেনাঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে ৷ সেই দাবি অবশ্য ভারত প্রমাণ-সহ খারিজ করে দেয় ৷ এরপর এদিন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেই ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন ৷ সেনাঘাঁটি ঘুরে দেখেন তিনি ৷ এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমরা (পাকিস্তান) ভারতীয় সেনার পরিকাঠামোগুলির কোনও ক্ষতি করতে পারনি ৷ শুধু তাই নয়, তোমাদের দেশের মাটি থেকে যদি আবারও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চলে তাহলে তোমাদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে ৷” গত 22 এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পর 6-7 মে রাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ভারতীয় সেনা ৷ এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’ ৷ তারপর এই প্রথম সেনা জওয়ানদের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী ৷ 10 মে রাত পর্যন্ত পাক সেনাদের ছোড়া ড্রোন, ইউএভি, ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দিয়েছে ভারতের এডিএস (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ও সেনা ৷ চার দিনের এই সংঘাতে পাকিস্তানের আটটি এয়ারবেসেও হামলা চালিয়েছে ভারত ৷ নূর খান ও রহিম ইয়ার খান এয়ারবেসের ক্ষয়ক্ষতির ছবিও দেখিয়েছে সেনা ৷ এই লড়াইয়ের জন্য ভারতীয় সেনাকে স্য়ালুট জানান প্রধানমন্ত্রী ৷ এদিন আদমপুর সেনা ঘাঁটিতে প্রায় 30 মিনিট ধরে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ তিনি বলেন, “আপনারা যা করেছেন তা অভূপূর্ব, অকল্পনীয় এবং ভাবনার অতীত ৷ অপারেশন সিঁদুর একটা পরিষ্কার ‘লক্ষ্ণণ রেখা’ টেনে দিয়েছে ৷”এয়ারবেস থেকে তিনি ফের ভারতের তিনটি রণনীতির কথা উল্লেখ করেন ৷ প্রথমত, তিনি বলেন, পহেলগাঁওয়ের হামলার পর ভারতে একটা নয়া বাস্তব তৈরি হয়েছে ৷ অপারেশন সিঁদুর স্থগিত হয়েছে মাত্র ৷ পাকিস্তান যে মুহূর্তে কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করবে, ভারত তার কড়া জবাব দেবে ৷ কিন্তু ভারতের নিজস্ব পদ্ধতিতে, নিজের শর্তে এবং নিজের নির্ধারিত সময়ে জবাব দেওয়া হবে ৷ দ্বিতীয়ত, পরমাণু হামলার হুমকি সহ্য করবে না ভারত ৷ তৃতীয়ত, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কথা হলে সন্ত্রাসবাদ নিয়েই কথা হবে ৷ পিওকে ফেরত দেওয়া নিয়েই কথা হবে ৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত মাতা কি জয় শুধুমাত্র একটা স্লোগান নয় ৷ সেনার কাছে এই স্লোগান দেশের জন্য আত্মত্যাগের প্রতিজ্ঞাও বটে ৷ সেনার সাহসিকতা ইতিহাসে খোদাই করা থাকবে ৷ সেনা, বায়ুসো এবং নৌবাহিনীকে আমার স্যালুট ৷” আদমপুর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বায়ুসেনা ঘাঁটি ৷ এখানে রাফাল এবং মিগ-20 যুদ্ধবিমান রয়েছে ৷ 1969 ও 1971 সালের যুদ্ধে এই সেনা ঘাঁটির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ৷
