কলকাতা পুজো

যাদের পুজোর বাজেট কোটি টাকা, তাদের অনুদান কেন? হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার

রাজ্যের বহু ক্লাবেরই দুর্গাপুজোর বাজেট কয়েক কোটি টাকা ! তাহলে তাদের কেন সরকারি অনুদান দেওয়া হবে ? দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান সংক্রান্ত মামলায় এই প্রশ্ন তুললেন মামলাকারীরা ৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে ৷ সেখানে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, আদতে কোন পুজো কমিটিগুলির টাকার প্রয়োজন আছে, তা খতিয়ে দেখা হোক ৷ এভাবে সবাইকে টাকা দেওয়া বন্ধ করা হোক ৷ শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত ৷এদিনের মামলার শুনানিতে বিকাশরঞ্জন বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি দুর্গাপুজোয় অনুদানের নামে টাকা দিচ্ছেন ৷ এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অনুদান দেওয়া হচ্ছে ৷ যা দেশের সংহতি এবং সংবিধানের বিরোধী ৷ এতে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হচ্ছে ৷ রাজ্যের মানুষের করের টাকা এভাবে খরচ করতে পারেন না মুখ্যমন্ত্রী ৷ জনগণের টাকা কোনওভাবেই অন্য কোনও খাতে খরচ করা যায় না ৷ এর জন্য রাজ্যপালের অনুমতি থাকা আবশ্যিক ৷ কিন্তু রাজ্য যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তা একেবারেই বিভাগীয় তথ্য আদানপ্রদানের সমতুল্য ৷ তাছাড়া, ইউনেস্কো কলকাতার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে বলেই রাজ্য সরকার কোষাগার থেকে টাকা খরচ করতে পারে না ৷ হাইকোর্ট ইমাম ভাতা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল ৷ কারণ, সেখানেও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হচ্ছিল ৷” এই একই যুক্তিতে দুর্গাপুজোয় অনুদান বন্ধের পক্ষে সওয়াল করেন বিকাশরঞ্জন ৷ আর এক মামলাকারীর তরফে আইনজীবী শমীক বাগচি বলেন, “যদি একান্তই অর্থসাহায্য করতে হয়, তাহলে যাঁদের সত্যিই অনুদানের প্রয়োজন কেবলমাত্র তাঁদেরই তা দেওয়া হোক ৷ বহু ক্লাব রয়েছে যাদের বাজেট কোটি কোটি টাকা ৷ তাদের কেন ৬০ হাজার টাকা করে রাজ্যের কোষাগার থেকে অনুদান দেওয়া হবে ?” এরই প্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগ বৃদ্ধি করাই রাজ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য ৷ যা করা হচ্ছে, পুরোটাই জনস্বার্থে করা হচ্ছে ৷ রাজ্যের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও তার প্রচার করাই হল রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য ৷ রাজ্যের আরও যুক্তি, ইমাম ভাতার সঙ্গে দুর্গাপুজোর অনুদানকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না ৷ কারণ, ইমাম ভাতার সঙ্গে নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছেন ৷ যাঁরা মসজিদে কাজ করেন ৷ কিন্তু, দুর্গাপুজো একটি জাতির প্রধান ও সার্বিক উৎসব ৷ এরপর প্রধান বিচারপতি জানতে চান, অনুদানের টাকা যে সঠিক খাতে খরচ করা হচ্ছে, তার প্রমাণ কী ? জবাবে অ্য়াডভোকেট জেনারেল জানান, প্রত্যেক ক্লাবের কাছ থেকে খরচ সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে ৷ সেগুলি পুলিশ খতিয়ে দেখবে ৷ সব শেষে প্রধান বিচারপতি মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্রাচার্যের কাছ অনুদানের টাকা খরচের রূপরেখা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চান ৷ বিকাশ জানান, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই ধরনের কাজ করে ৷ প্রয়োজনে তাদের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে ৷