কলকাতাঃ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টকে কেন্দ্র করে অনেক জলঘোলা হয়েছিল ৷ এবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করল রাজ্য সরকার ৷ রাজ্যের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ নস্যাত্ করে আদালতে এই মর্মে সোমবার হলফনামা জমা দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা। আগামী কাল বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। স্বরাষ্ট্র সচিব কমিটির রিপোর্ট সম্পর্কে গুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কমিটিকে শুধুমাত্র পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল। কমিটি কোন কিছু সুপারিশ করতে পারে না। এখানে কমিটি সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর কথা বলেছে। যেটা এক্তিয়ার লঙ্ঘন করা হয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে ভোট-পরবর্তী অশান্তির জন্য রাজ্যের পরিকাঠামো দায়ী। রিপোর্টে একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনের সম্মানহানি করা হয়েছে। বরং ফলাফল ঘোষণার পর থেকে রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসন সব রকম ভাবে অশান্তি মোকাবিলায় নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। * রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে, এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নেতিবাচক রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, কমিটির মেম্বারদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ রয়েছে। অনেকের উপর কেন্দ্রের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। যাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায় না। স্বরাষ্ট্র সচিব এই বক্তব্যের সপক্ষে। কমিটি সদস্যদের কয়েকজনের অতীত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজীব জৈন বিজেপি সরকারের আমলে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সময় তিনি আহমেদাবাদের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো প্রধান ছিলেন। আতিফ রশিদ ছিলেন বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলের দায়িত্বে। এমনকি চলতি বছরে দিল্লির পুরভোটে বিজেপি হয়ে লড়াই করেছেন। ২০১৭ সালে গুজরাটের বিজেপির প্রকল্প বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও- এর অফিসার ইন চার্জ ছিলেন শ্রীমতী রাজুবেন দেশাই। স্বরাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণীত, সম্পূর্ণ ভুল রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। তথ্যসহ রাজ্য উত্তরে জানাল, মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের জন্য ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৮২ টাকা খরচ হয়েছে। দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাও। কমিটির সদস্যদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিবর্গেরও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে রাজ্য বিল মিটিয়েছে। হোটেল, গেস্ট হাইজের বিল-সহ হাইকোর্টে জমা পড়েছে সোমবার। ৭ সদস্যের কমিটির ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ রিপোর্ট একতরফা, অতিরঞ্জিত, মনগড়া ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি। কেন এমনটা রাজ্য বলছে তথ্য সহ ব্যাখা হলফনামার আকারে জানিয়েছে রাজ্য।
১) শাসকের আইন চলে, আইনের শাসন নেই। এই সুপারিশ ওড়ালো রাজ্য। রাজ্যের যুক্তি, Protection of Human Rights Act.1993 মেনে কাজ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আইনের ১৪(৫) নং ধারা ভাঙা হয়েছে। কমিটি প্রথমে অনুসন্ধান তথ্য দেবে এনএইচআরসি-কে। সেই তথ্য যাচাইয়ের পর NHRC সিবিআই কে দিয়ে তদন্ত বা অন্য কাউকে দিয়ে তদন্তের সুপারিশ করতে পারে। এক্ষেত্রে কমিটি সরাসরি এক্তিয়ার লঙ্ঘন করে সিবিআই সুপারিশ করেছে যা আইনবিরুদ্ধ কাজ। ২) এই রিপোর্ট সম্ভবত রাজ্যের অসংখ্য পুলিশ কর্মী এবং প্রশাসনিক সদস্যদের সম্মানহানি করতেই করা হয়েছে।
৩) রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে কমিটির মেম্বারদের মধ্যে ৩ জনের বিজেপি যোগ রয়েছে। অনেকের উপর কেন্দ্রের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। যাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায় না। ক) রাজীব জৈন: কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সেই সময় তিনি আহমেদাবাদের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো প্রধান ছিলেন। ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৮ মেয়াদ শেষ হলেও কাকতালীয় ভাবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত পদে থেকে যান। খ) আতিফ রশিদ: যাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে নামেই যুক্ত রয়েছে বিজেপি। এছাড়া বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলের দায়িত্বে সামলেছেন বলে হলফনামায় দাবি রাজ্যের। দিল্লির পুরভোটে বিজেপি হয়ে লড়াই করেছেন। গ) শ্রীমতী রাজুবেন দেশাই : ২০১৭ সালে গুজরাটের বিজেপির প্রকল্প বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও তার দায়িত্ব সামলেছেন।
৪) ৫০ টি অভিযোগ ধরে ধরে কমিটির যুক্তি খারিজ রাজ্যের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত মনগড়া রিপোর্ট। রিপোর্ট কোন তথ্যোর ভিত্তিতে তার উল্লেখ নেই। রাজ্যের কাছে বাংলায় লিখে করা অভিযোগ, কমিটি দেখাচ্ছে ইংরেজিতে লেখা কমপ্লেন।
৫) বিজেপি ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক কর্মীর বাড়ি পরিদর্শনে যায়নি কমিটি সদস্যরা। সিপিএম, আইএসএফ, কংগ্রেস কর্মীদের বাড়ি যায়নি পরিদর্শনে কমিটি এটাই বোঝাতে চাইছে রাজ্য। জনস্বার্থ মামলাকারী আইনজীবী অনিন্দ্য সুন্দর দাস এমনটাই জানান। ভোট পরবর্তী অশান্তি মামলার পরবর্তী শুনানি বুধবার। সিবিআই সুপারিশ কী এরপরও মানবে হাইকোর্ট, উত্তর দেবে ভবিষ্যত্।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে এবার পাল্টা দিল রাজ্য সরকার। ‘৭৯৯৩৮২ টাকা খরচের NHRC কমিটি রিপোর্ট অতিরঞ্জিত, মনগড়া’ এই মর্মেই সওয়াল করল রাজ্য। ৩৪২৮ পাতার রিপোর্টে কোনো প্রমাণ ছাড়া অনুমানের উপর ভিত্তি করে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের অপরাধী বলা হয়েছে। অথচ কিসের ভিত্তিতে এই দাবি তার কোনো প্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি।