মহালয়ার সকালে চারিদেকে আলোর বেণু ৷ ‘গোত্রে অস্মতপিতা দেব শর্মা বসুরূপৎ তৃপ্যতমিদং তিলোদকম গঙ্গা জলং’ – এই মন্ত্রোচ্চারণে পুরুষ থেকে মহিলারা সকলে তর্পণে সামিল হয়েছেন ৷ রবির ভোর থেকে কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক ঘাটে তর্পণের ভিড় ৷ মহালয়ার এই পুণ্য তিথিতে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে চলে জল ও অন্ন দান ৷ রবিবার সূর্যোদয়ের পূর্বেই ভোর থেকে পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় সর্বত্র শুরু হয় তর্পণ। গঙ্গা তো বটেই, অন্য নদীর ঘাটেও সকাল থেকে এই একই ছবি ৷ পিতৃপুরুষদের তৃপ্ত করতে ভিড় বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে। হাওড়ার বালি থেকে শিবপুর হয়ে প্রতিটি গঙ্গার ঘাটে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে চলে তর্পণ ৷ পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ভিড়ের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য শিবপুরের রামকৃষ্ণপুর ঘাট, হাওড়া ময়দানের তেলকল ঘাট, সালকিয়ার বাঁধাঘাট, ঘুসুড়ির গোসাইঘাট, শিবপুর ঘাট ৷ রয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তাও। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ ও রিভার ট্রাফিক পুলিশও। ঘাটে নির্দিষ্ট স্থান তর্পণের জন্য চিহ্নিত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দড়ির ওপারে রয়েছে জল পুলিশের বিশেষ দলের নৌকা। এদিকে, হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘাটে যেমন নজরদারি চালানো হয়, তেমনই গঙ্গায় নামানো হয় স্পিডবোট ও নৌকা। পুলিশের পাশাপাশি ঘাটগুলিতে নজরদারি চালায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। বেশ কয়েকটি ঘাটে চলে ড্রোনের নজরদারিও। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চলছে মাইকিংও।
পিতৃপক্ষ
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে পূর্বপুরুষদের তর্পণ করার প্রথা প্রচলিত ৷ আশ্বিন মাসের অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কাল পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। পুরাণ অনুযায়ী, পিতৃপক্ষের সময় পূর্বপুরুষরা পৃথিবীতে নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় তাঁরা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পিণ্ড ও জল গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করে সন্তানের পাশে থাকেন। এই পক্ষে অন্ন ও জল দিলে পূর্বপুরুষরা শক্তি পান। যার ভিত্তিতে তিনি পরলোকে যাত্রা করতে পারেন ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ করেন।


