নয়াদিল্লিঃ অযোধ্যা মামলায় বরিষ্ঠ আইনজীবী রাজীব ধাওয়ানের বিরুদ্ধে চরম অনৈতিকতার অভিযোগ তুলে বার কাউন্সিলের দ্বারস্থ হলেন বিপক্ষের আইনজীবীরা। মুসলিমপক্ষের বরিষ্ঠ আইনজীবী রাজীব ধাওয়ানের বিরুদ্ধে হিন্দু পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, যে মানচিত্রে তথাকথিত রামজন্মভূমি দেখানো হয়েছে, সেই মানচিত্রটি সুপ্রিম কোর্টে শুনানির মধ্যেই ছিঁড়ে দেন ধাওয়ান।ধাওয়ানের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথা বলে বার কাউন্সিলে চিঠি দিয়েছে হিন্দু মহাসভার একটি শাখা। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেধতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে ৪০ দিন ধরে শুনানি চলেছে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার। বুধবারই শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানির শেষ দিনে ভিড়ে ঠাসা আদালতকক্ষের মধ্যেই হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বিকাশ সিংয়ের দেওয়া মানচিত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন ধাওয়ান।হিন্দু মহাসভার মুখপাত্র প্রমোদ পণ্ডিত জোশী এক বিবৃতিতে ধাওয়ানের এই আচরণের নিন্দা করে বলেছেন, এই আচরণের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের অবমাননা করেছেন ধাওয়ান। তাই ধাওয়ানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপের আর্জি করেছেন।অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলায় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও অন্য মুসলিম মক্কেলদের পক্ষে সওয়াল করছেন রাজীব ধাওয়ান। ভারতীয় ও বিদেশি বিভিন্ন লেখককে উদ্ধৃত করে বিকাশ সিং বলছিলেন, বাবরি মসজিদর গম্বুজটি যে জায়গায় ছিল, সেটিই রাম লালার জন্মস্থান, তারই বিরোধিতা করতে গিয়ে মানচিত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন ধাওয়ান। তিনি বলেন, তাই সিংয়ের আনা বই ও মানচিত্র নির্ভরয়োগ্য নয়, অন্য নথির উপরে নির্ভর করে ‘জন্মস্থান’ নিয়ে আগেই সওয়াল হয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্টে।তীব্র বিরোধিতা করার বিহার ক্যাডারের প্রাক্তন আইপিএস কিশোর কুণালের লেখা ‘অযোধ্যা রিভিজিটেড’ বইটির মানচিত্রকে নথি হিসাবে পেশ করার তীব্র বিরোধিতা করেন ধাওয়ান। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চকেই তিনি প্রশ্ন করে বসেন যে, ওই মানচিত্রটি নিয়ে তিনি কী করবেন। তখন সাংবিধানিক বেঞ্চ বলে যে তিনি সেটি ছিঁড়ে ফেলতে পারেন। তারপরেই ভিড়ে ঠাসা আদালতকক্ষের সকলকে অবাক করে দিয়ে হিন্দু মহাসভার আইনজীবীর পেশ করা মানচিত্রটি তিনি ছিঁড়ে ফেলেন।নাটক অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে ধাওয়ান সেই প্রসঙ্গ তুইলে বলেন, মানচিত্র ছিঁড়ে ফেলার কথা বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “আমি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ওই মানচিত্র ছিঁড়ে ফেলেছি বলে আদালতের বাইরে খবর ছড়িয়ে পড়েছে।” ধাওয়ান বলেন, তিনি জানতে চেয়েছিলেন ওই কাগজগুলি তিনি ছুড়ে ফেলতে পারেন কিনা, তখন দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদি ওগুলি অপ্রয়োজনীয় হয়, তা হলে ছিঁড়ে ফেলতে পারেন।” ধাওয়ানের যুক্তি, তিনি কেবলমাত্র প্রধান বিচারপতির নির্দেশ পালন করেছেন। প্রধান বিচারপতিও বলেন, “ধাওয়ান ঠিকই বলেছেন যে এ কথা প্রধান বিচারপতিই বলেছিলেন, এই খবরটাও একই ভাবে প্রচারিত হোক।” পরে বেঞ্চের আরেক বিচারপতি এসএ নাজর বলেন, “এই খবরটি ছড়িয়ে পড়েছে।”সিং যখন সওয়াল করছিলেন তখন বার বার তাঁকে বাধা দেওয়ায় বেঞ্চ বিরক্ত হচ্ছিল, তখন বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের হিসাবে শুনানি শেষ হয়ে গেছে।