কলকাতা: পঞ্চমীতে মেঘের আড়াল সরিয়ে প্রকাশ্যে মেঘনাদ। সিবিআইকে ‘বলে বলে’ গোল গিয়ে প্রায় একমাস পরে প্রকাশ্যে এলেন রাজ্যের সিআইডি প্রধান রাজীব কুমার। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারপতি সইদুল্লা মুন্সি এবং শুভাশিস দাশগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ দেওয়া হয় রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা আগে নোটিস পাঠাতে হবে।আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন আলিপুর নিম্ন আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে আগাম জামিন নিশ্চিত করেন প্রাক্তন নগরপাল। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর আগাম জামিন মঞ্জুর হয়, সেই আগাম জামিন নিশ্চিত করতে এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বৃহস্পতিবার সকালে আলিপুর আদালতে হাজির হন তিনি। যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে গাড়িতে করে বেরিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আইনজীবী এবং দেহরক্ষী। আদালত সূত্রে খবর, এদিন তাঁর আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। এদিকে, রাজীব কুমারকে আগাম জামিন দেওয়ার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, সম্ভবত আজই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে। রাজীব কুমারকে ধরতে প্রায় এক মাস ধরে নাকানিচোবানি খাচ্ছিলেন সিবিআইয়ের দুঁদে গোয়েন্দারা। দেশের ‘এলিট’ গোয়েন্দারা অনেকেই আবার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেই ফেলছিলেন, তারা একপ্রকার ব্যর্থ। কারণ, প্রযুক্তিতে তুখোড় প্রাক্তন নগরপাল এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, তাতে নয় সেকেন্ড অন্তর তাঁর অবস্থান বদলে যাচ্ছে। ফলে তাঁকে নাগালে পাওয়া দুঃসহ হয়ে উঠছে। এরপর সিআইডি প্রধানকে নাগালে পেতে যোগীর রাজ্য থেকে উড়িয়ে আনা হয় একদল গোয়েন্দাকে। দিন সাতেক পর তাঁদের ব্যর্থতা বুঝতে পেরেই সিবিআই সদর দফতর ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদেরও ফিরিয়ে নেয়। তারপরেও অধরা ছিলেন রাজীব কুমার।তবে আড়ালে থেকে সব লড়াই চালাচ্ছিলেন অতি সন্তর্পনে। একের পর এক মামলা করে গিয়েছেন কখনও বারাসত আদালতে, কখনও আলিপুর আদালতে আবার কখনও কলকাতা হাইকোর্টে। ফলে সিবিআই গোয়েন্দাদের অনুমান ছিল, তিনি রয়েছেন শহরেই। ফলে তাঁকে খুঁজতে গোয়েন্দারা শহর থেকে শহরতলীর পাঁচতারা হোটেল থেকে রিসর্ট তোলপাড় করে ফেলেন। ঢুকে পড়েন পাঁচতারা হোটেলের হেঁসেলেও। কিন্তু কোথায় কী! হাইকোর্ট রাজীর কুুমারের রক্ষাকবচ সরিয়ে নেওয়ার পরই তাঁকে হাজিরার নোটিস পাঠায় সিবিআই। তবে তিনি হাজিরা দেননি। সিবিআইকে পাঠানো জবাবি ই-মেলে তিনি জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেমন তিনি। ফলে হাজিরা দিতে পারবেন না। একইসঙ্গে হাজিরার জন্য একমাস সময় চেয়ে আবেদনও জানান। কিন্তু, সিবিআই তাঁকে কোনওরকম সময় দিতে চায়নি। ফলে তাঁকে আবারও নোটিস পাঠানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কিছুতেই কোনও লাভ হয়নি।এরপরেই রাজীব কুমারের বিষয়ে তথ্য পেতে নবান্নের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, তৎকালীন মুখ্যসচিব মলয় দে (৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নিয়েছেন তিনি), স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর অবস্থান জানতে চেয়ে চিঠি পাঠান। সেই চিঠির জবাবে সিবিআইকে জানানো হয়, ৪-২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন রাজ্যের সিআইডি প্রধান। তবে ছুটি শেষ হয়ে গেলেও তাঁর খোঁজ পায়নি সিবিআই। এরপর আজ মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আলিপুর আদালতে এলেন তিনি।