কলকাতাঃ ছা-পোষা বাঙালির আজ বছরের সেরা দিন। আজ মহাষ্টমী। সারা বছর সারা বিশ্বের কয়েক কোটি বাঙালি এই দিনের জন্যই অপেক্ষা করে থাকে অধীর আগ্রহে। আর শহর কলকাতা এর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে প্রথমে। আজ পুজোর সেমিফাইনাল। যে কোনও মূল্যে জিততেই হবে। সেখানে সপ্তমীর বৃষ্টি কিংবা অষ্টমীর বৃষ্টির পূর্বাভাস কোনও কিছুই ছাপ ফেলে না। সপ্তমীর বৃষ্টির পরেও যেভাবে মানুষ রাজপথে নেমেছে, তাতে স্পষ্ট আজ নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙতে চলেছে তিলোত্তমা। কলকাতা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সপ্তমীর রাত তিনটে পর্যন্ত দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতার গোটা দশেক মন্ডপে লক্ষাধিক লোক ভিড় জমিয়েছেন। অষ্টমীতে সেই সংখ্যাটা বাড়বে বই কমবে না। তথ্য বলছে, শুধু কলকাতা বা শহরতলীই নয়, সুদূর উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা থেকেই মানুষেরা এসেছেন কলকাতার পুজো দেখতে।পাশাপাশি, কলকাতা মেট্রো সপ্তমীর দিন ভোররাত পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ যাত্রী বহন করে ফেলেছে। যা নতুন রেকর্ড বটে। মেট্রোর তরফ থেকেই জানানো হয়েছে অষ্টমীর জন্য আলাদা পরিকল্পনা থাকছে। যদিও সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মেট্রো ভোর চারটে পর্যন্তই চলবে।দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া এভারগ্রিন, সিংহিপার্ক, সুরুচি সংঘ, চেতলা অগ্রণী, সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক, ম্যাডক্স স্কোয়ার সর্বত্রই সপ্তমীর সন্ধ্যা থেকে ছিল উপচে পড়া ভিড়। কাশী বোস লেনের অন্যতম কর্মকর্তা সোমেন দত্ত বলেন, ‘এবারে বৃষ্টির ভয়ে মানুষ তৃতীয়া থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছে। তা চতুর্থী পঞ্চমীতে মাত্রা ছাড়িয়েছিল। আর তা সপ্তমীতে আশাতীত জায়গায় গিয়েছে। আশা করছি অষ্টমীতে রেকর্ড গড়তে পারব।’এতটা ভিড় হবে ভাবতেই পারেননি দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুর লেকপল্লীর কর্মকর্তা সোমনাথ দাস বা বেহালা ক্লাবের কর্মকর্তারা। সোমনাথ বলেন, ‘ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই বুঝতে পারছিলাম ভিড় মাত্রা ছাড়াবে। ফলে রাত যত বেড়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের ভিড়।কিন্তু এতটা আশা করিনি।’উত্তর কলকাতার বাগবাজার সর্বজনীন, আহিরীটোলা সর্বজনীন, দমদম পার্ক ভারত চক্র, শ্রীভূমির পুজোতেও ছিল একই চিত্র। মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক, কলেজ স্কোয়ার, কোনও মণ্ডপেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না। আলোর রোশনাই, জমকালো সাজপোশাকে সুসজ্জিত মানুষ যেন চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। লালবাজার সূত্রের খবর, পুজোর সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন শহর জুড়ে থাকছে প্রায় ১৮ হাজারের মতো পুলিশকর্মী। এর সঙ্গে থাকছে ৬০০ থেকে ৭০০ মহিলা পুলিশও। মোতায়েন থাকছে দমকলের ১২টি পাইলট কার, অ্যাম্বুল্যান্স। রাতের দিকে শহরের ছোট মণ্ডপগুলিতেও টহল দেবে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। তাই অষ্টমীর রাতেও থাকছে সবরকম ব্যবস্থা। নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে দর্শকদের ঠাকুর দেখতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকেও কড়া নজর রয়েছে প্রশাসনের।