কলকাতা

রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ৩৮, সুস্থ হয়ে ফিরছেন ১২জনঃ মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতাঃ আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, রাজ্যের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৯জন শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে আসার আগে আমি বেলেঘাটা আইডি থেকে খবর নিয়ে এসেছি। আমার মনটা ভাল হয়ে গেছে। ওখানকার করোনা আক্রান্ত ৯জন আজ বাড়ি ফিরছেন। বাকি সবাই ভাল আছেন।” এর আগে বাংলার প্রথম ৩জন করোনা আক্রান্ত বাড়ি ফিরেছিলেন। আজ এই ৯ জনকে যুক্ত করলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, দেশের মধ্যে সবথেকে ভাল লকডাউন হচ্ছে বাংলায়। মানুষ সতর্ক, সচেতন হয়ে লকডাউন মানছেন। করোনা মোকাবিলাতে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রসংশা করলেন ।তিনি বলেন তারা শুধু করোনা মোকাবিলা তে রাস্তায় নেমে মানুষকে বোজাচ্ছেই না রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের প্রতিদিন যে প্রায় ১২০০ ইউনিট রক্ত লাগে তার যোগান দিচ্ছে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ স্বেচ্ছায় রক্ত দেন করে তিনি বলেন রাজ্যের পুলিশের এই ভূমিকা দেশের কাছে মডেল ।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন রাজ্যে ৫২ হাজার ২৯ জন এখনও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। ২ হাজার ৯৩৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আগামী দু’সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যাটা আরও বাড়বে। কিন্ত চিন্তা করবেন না। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সমস্ত রোগী ভালো আছে ৷ চিকিৎসায় সারা দিচ্ছেন আক্রান্তরা ৷ আমরা সবাইকে সুস্থ করে ভাল করে দেব। রাজ্যে ২০৬ কোয়ারান্টাইন সেন্টার হয়েছে। দুর্যোগ আসবে, দুর্যোগটাকে জয় করতে হবে।তিনি আরও বলেন “শুনছি কালিম্পংয়ের একটি পরিবারের আরও ছ’জন আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁদের পরীক্ষা করা হবে। পজিটিভ হলে একই পরিবারের ১০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়বেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ৬জনের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। অর্থাৎ অ্যাকটিভ পজিটিভ ৩৮ জনের মধ্যে তাঁদের নাম নেই। কালিম্পংয়ের ওই পরিবারের এক মহিলা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে রয়েছেন আরও চারজন। মিষ্টি, ওষুধের দোকানেও দূরত্ব মেনে চলুন ৷ রেশন লাইনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন ৷ করোনা সংক্রমণ রুখতে সবাই সহযোগিতা করুন ৷ ২০ সেকেন্ড ধরে হাতে স্যানিটাইজার লাগাবেন। ১১ লাখ পিপিই অর্ডার দেওয়া হয়েছে ৷ করোনার চিকিৎসায় রাজ্যে ৫৯টি হাসপাতাল কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন এও বলেন , “লকডাউনে রাজ্যের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে । কিন্তু রাজ্যকে সাহায্য করেনি কেন্দ্র। মাস্ক পর্যন্ত দেয়নি। রাজ‍্য সরকার সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে । বাংলা যা করে দেখিয়েছে এটা একটা মডেল। “এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী সব শুনেছেন । রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি । কিন্তু কোনও আশ্বাস মেলেনি ।” কেন্দ্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাজনীতি বন্ধ করুন । করোনা নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতি করছে । এখন রাজনীতি করার সময় নয়। সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে ।” করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে লক ডাউন এর মধ্যেই রাজ্য সরকার শুক্রবার রাজ্যের ৩৫ লক্ষেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দুই মাসের পেনশন অগ্রিম প্রদান করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিকদের বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মধ্যেই শুক্রবার ৩৫ লক্ষ ১০ হাজার ২০০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পেনশন তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৭ হাজার তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের মাসিক এক হাজার টাকা করে পেনশন রয়েছে বলেও তিনি জানান। পাশাপাশি সরকারি কর্মীদের বেতনও গত ১ তারিখে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল ও মে মাসের পেনশন অগ্রিম দিয়ে দেওয়া হবে বলে রাজ্য সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল। রাজ্যের সব বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছেও তাদের কর্মীদের বেতন দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর মোমবাতি ও দিয়া জ্বালানোর বার্তার প্রতিক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যপাধ্যায় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, রাজনৈতিক যুদ্ধ লাগাবেন না, ‘যদি আপনার মনে হয় শুনবেন, না হলে শুনবেন না!’ তিনি সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে উত্তরে জানালেন, আপনার যদি ইচ্ছা হয় আপনি প্রধানমন্ত্রী কথা শুনে প্রদীপ জ্বালাবেন। আর আমার ইচ্ছা হলে আমি ঘুমোব।