কলকাতাঃ ভারত সিএএ চাইছে কিনা তা জানতে এবার রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো কোনও নিরপেক্ষ সংগঠনের নেতৃত্বে গণ ভোটাভুটি করার আহ্বান জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি রোডের প্রতিবাদ সভায় মমতা বললেন, ‘মানুষকে ধাক্কা দিলে ধাক্কা নিজেকে খেতে হয়। ধাক্কা সামলাতে হলে গণভোট করুন। আমি চাই সিএএ নিয়ে গণ ভোটাভুটি হোক। রাষ্ট্রপুঞ্জ বা ওই ধরনের কোনও নিরপক্ষে সংগঠনকে দিয়ে একটা কমিটি তৈরি করা হোক। সেখানে তৃণমূল, বিজেপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দল থাকবে না। সেই কমিটির নেতৃত্বে গণভোট হোক। আমি দেখতে চাই কটা লোক সিএএ মানছে। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । এদিন কাঁসর বাজিয়ে অভিনব কায়দায় সভা শুরু করেন মমতা। শুরু থেকেই বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন তিনি। ১৯৫১ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জন সঙ্ঘ পরে ভেঙে গিয়ে ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি–র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আডবাণী। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘যারা বলছেন বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দিতে হবে, তাদের নিজেদের সার্টিফিকেট আছে তো? যে দলটার জন্মই ১৯৮০ সালে তারা তাঁদের কাছ থেকে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে যাঁদের জন্ম ১৯৫০, ৬০, ৭০–র দশকে। কেন ৭৩ বছর পর প্রমাণ দিতে হবে যে আমরা এদেশের নাগরিক। আজ যারা প্রমাণ চাইছে সেসময় বিজেপির মাথারা কোথায় ছিল। হঠাৎ করে কে মাথার দিব্যি দিল যে বিজেপির মাদুলি পরে প্রমাণ করতে হল কেউ ভারতের নাগরিক।’ বিজেপি মানুষে–মানুষে লড়াই বাঁধিয়ে বিভেদের রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করে মমতা বললেন, ‘এটা হিন্দু–মুসলিম আন্দোলন নয়। এটা ভারতের আন্দোলন। এটা গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন। এই আন্দোলন কোনও সম্প্রদায়ের নয়, মানবাধিকারের, অধিকারের আন্দোলন।’ আধার, প্যান, রেশন যদি নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ না হয় তাহলে এতো ঘটা করে সারা দেশের আধার কার্ড কেন করা হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য –
- আমরা সবাই নাগরিক এই আওয়াজ তাকে আমাদের তুলে ধরতে হবে। কারো দয়ায় আমরা এখানে বাস করি না।
- ৭৩ বছর পর আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা নাগরিক কি নাগরিক না এটা খুব লজ্জার। বিজেপির নেতারা দেশের স্বাধীনতার আন্দোলন করেনি। দেশ ভাগাভাগি করছে এখন।
- আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। আমরা নানান সামাজিক আন্দোলন করবো। এই ভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাবো। নাগরিক সংশোধনী আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। একটা রাজনৈতিক দল ঠিক করবে কে থাকবে আর কে থাকবে না,সেটা হয় না। বিজেপির বিরুদ্ধে আছে ৬২% মানুষ।
- আজ আমাদের দুর্ভাগ্য। বিজেপির মাদুলি পরে প্রমাণ করতে হবে। যে আমরা এই দেশের নাগরিক কি নাগরিক না।
- বিজেপি করলে ভালো না করলে কালো, বিজেপি না করলে জেলে। রাম চন্দ্র গুহার মতো মানুষকে অসম্মান করা হয়েছে। গোটা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। এটা হিন্দু মুসলমান এর আন্দোলন নয়। দেশের মানুষের আন্দোলন এটা।
- বিজেপির খেলাকে বন্ধ করে দিন। বিজেপি বাজার থেকে টুপি কিনেছে। এই ধরনের টুপি পরে অশান্তির করবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
- বিজেপি ফেক ভিডিও করে। এটাকে বিশ্বাস করবেন না। এটাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। টাকা অনলাইনে নাম তুলে দিতে পারে ভুল ভাবে সেখানে নাম তুলতে পারে বিজেপি। সেখানে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণনার নাম করে ফন্দি হতে পারে। সেই কারণে আমরা এখানে জনগণনা করতে দিচ্ছি না।
- সবাইকে ভয় দেখিয়ে, সংবিধান না মেনে যা ইচ্ছা করে দেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি বিজেপি শাসিত রাজ্যে ১৪৪ ধারা লাগু করা হয়েছে। যত দিন যাবে বাংলার মাটিতে আন্দোলন আরো বাড়বে। এই আন্দোলন নিজের অস্তিত্বের আন্দোলন।
- যত দিন যাবে বিজেপি তত ধাক্কা খাবে। তাই ধাক্কা সামলাতে হলে গণভোট হোক। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে হবে ভোট। একটা কমিটি তৈরি করে হোক ভোট। আগুন নিয়ে খেলবার চেষ্টা করবেন না। সব কিছু ফিরে পাওয়া যায়। অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না।