কলকাতাঃ পুজোর মরসুমে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কিছুটা বন্ধই ছিল। তবে পুজো মিটতেই দলের হালহকিকত জানতে আজ বৈঠকে বসছে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের শাসকদলের প্রতিটি জেলার সভাপতিদের পাশাপাশি ব্লক ও টাউন সভাপতিদের নিয়ে আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে থাকবেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে খোদ তৃণমূল নেত্রী থাকবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, বেলা আড়াইটা নাগাদ ওই বৈঠকে থাকতে পারেনে ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরও।পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়াদ ফুরোতে চলেছে আরও অনেকগুলি পুরসভার। ফলে মাস দুয়েকের মধ্যে কমবেশি ১১০টা পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তার আগে তৃণমূল সুপ্রিমো পরিস্থিতির হিসেব-নিকেশ নিতে চাইছেন। সে জন্যই সব ব্লক কমিটি , টাউন কমিটি, জেলা নেতৃত্বকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তবে কী বিষয়ে এই বৈঠক, তৃণমূলের তরফে এখনও স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি।লোকসভা ভোটের পর প্রতিটি জেলার নেতৃত্বর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোর কমিটির বৈঠকও হয়েছে। এবার জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ইতিমধ্যেই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মতো ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলগুলিকে বিপাকে ফেলেছেন তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, দুর্গাপুজোয় বিজেপি জনসংযোগের কর্মসূচি নিতে গিয়ে হালে পানি পায়নি। এখনও উৎসবের মরসুম চলছে। যার মধ্যে রয়েছে ছট পুজো ও কালী পুজোর মতো উৎসব। সেই অনুষ্ঠানগুলিতেও দলীয় কর্মীরা যেন এক হয়েই তৃণমূল স্তরেই থেকে রাজনৈতিক মাটি আরও শক্ত করতে পারেন সেদিকেই নজর দিতে চায় ঘাসফুল শিবির। তাই এদিনের বৈঠক থেকে দলকে কী দাওয়াই দেয় শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।অন্যদিকে, পাড়ায় পাড়ায় ‘সমাজ বন্ধু’র খোঁজে তৃণমূল। আইনি সমস্যা হাতের নাগালেই পাড়ায় রয়েছে ‘বন্ধু’। এলাকায় কোথাও জমা জল থেকে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে মুশকিল-আসান আছে সেই ‘বন্ধু’। ভোটার লিংকে সমস্যা হোক কিংবা হঠাৎ ডাক্তারের দরকার আছেন তিনিই। ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করা বা পুরসভার ট্যাক্স দিতে হবে হয়রানি হচ্ছে, আছেন সেই ‘বন্ধু’। শহর কিংবা মফস্বল পাড়ায় পাড়ায় এমন পরোপকারী ‘বন্ধু’র দেখা মেলে। এমনই মুশকিল আসান খুঁজছে তৃণমূল কংগ্রেস। ‘সমাজ বন্ধু’র খোঁজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।তারা কেউ হতে পারেন প্রাক্তন বিচারপতি কিংবা প্রাক্তন আমলা কিংবা দুদে আইনজীবী আবার কেউ প্রাক্তন শিক্ষক বা সমাজের অন্য কোন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট। কিন্তু সব পাড়ায় যে বিশিষ্ট দেখা মিলবে তা তো নয় সেক্ষেত্রে পাড়ায় পাড়ায় মানুষ মান্যিগন্যি করে এমন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পাওয়া যায় প্রয়োজনে তারাও থাকবে এই তালিকায়। পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমনই মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করতে চায় দল।ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে সমস্ত ব্লক প্রেসিডেন্টদের এমনই কুড়ি জন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের নামের তালিকা, ফোন নাম্বার, রাস্তার নাম- ঠিকানা সহ একটি তালিকা তৈরি করে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু আদতে লক্ষ সামনের পুরভোট।সূত্রের খবর, পুরভোটের আগে বিভিন্ন এলাকায় এমনই বিশিষ্টদের মত শুনতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। বলা যেতে পারে পুরভোটের আগে একটা সমীক্ষা। একদম নিচে তলায় দলের জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি কেমন, তাদের কি পরিচয়, মানুষ কি তাঁকে চাইছে নাকি সেই জাযগায় অন্য কাউকে প্রার্থী করলে ভালো হয়, এই সবকিছু নিয়েই একটা সমীক্ষা করতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কিন্তু এসবের এসবের বাইরে আরও একটা বড় ক্ষেত্র তৈরির তাগিদ রয়ছে তৃণমূলের। কি সেই ক্ষেত্রে? অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এলাকায় অসন্তোষ, অভিযোগ থাকে। কখনো জনপ্রতিনিধিকে বারবার জানিয়েও তাকে দিয়ে কোন কোন কাজ হয় না। সেক্ষেত্রে দল, প্রশাসন এবং আমজনতা সঙ্গে এক নিবিড় যোগসূত্র রাখতে এদেরকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে এই অরাজনৈতিক লোকজন কেনই বা সাহায্য করবে তৃণমূল কংগ্রেসকে। দলের নির্দেশ, এই কুড়ি জনের তালিকা যারা থাকবে তারা যেন সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিক হয় কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা তৃণমূলের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী নাও হতে পারে তাহলে কিভাবে তাদের কাজে লাগানো হবে।
তৃণমূল সূত্র বলছে, তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে অনুরোধ করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে। স্থানীয় মানুষের সমস্যা কোথাও কোনো দরকার পড়লে তাদেরকে দিয়ে সেই কাজ করিয়ে নেওয়া প্রশাসনে তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিচতলার কাজের যোগাযোগ তৈরি করতে এদেরকে কাজে লাগানো যেতে পারে।কিন্তু তারা কেউই অরাজনৈতিক নয় এমনও হতে পারে যে তারা হয়তো অন্য কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বা মনেপ্রাণে অন্য কোন দলের আদর্শে বিশ্বাসী। অনেক সময় অনেক কিছুতেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই যায়। সেই জায়গা থেকে পাড়ায় পাড়ায় সমস্যা মেটানোর কাজে এই সমাজ বন্ধুদেরই কাজে লাগাতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সব পাড়ায় যে বিশিষ্ট কে পাওয়া যাবে তেমন তো কথা নয়। সেক্ষেত্রে স্থানীয় কোন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক প্রাক্তন আমলা-আধিকারিক, কোন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার বা কোন প্রাক্তন উকিল এই ধরনের মানুষ থাকবে তালিকায়। মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূল ভবনে জরুরি বৈঠক মনে করা হচ্ছে দিদিকে বল কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সূত্রেই বিভিন্ন ব্লক সভাপতি, জেলা সভাপতিদের সামনে এই বিষয়গুলিকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হতে পারে।
একদিকে যেরকম পুরো ভোটের আগে এই ধরনের মানুষের থেকে থেকে দলের সম্পর্কে ফিডব্যাক নিতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে তার থেকেও বড় কথা সাধারণ মানুষের একদম নিচুতলার সমস্যা সমাধানের পাড়ায়-পাড়ায় এমন ‘সমাজ বন্ধু’দের কাছে পেতে চাইছে দল। যাদের থেকে ভালো কাজের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, পুর-পরিষেবার সমস্যা থাকলে কোথায় কি হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে জানকারি পাওয়া সম্ভব, ঠিক তেমন ভাবে তাদেরকে দিয়ে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে দলের ওপর মহলের যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। তাদের সঙ্গে তৃণমূলের সরাসরি যোগাযোগ নাও থাকতে পারে। তারা তৃণমূলের সমর্থক নাও হতে পারে কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমজনতা বা কোনো ভোটারের সমস্যা মেটাতে তাদের কাছে মানুষ দ্বারস্থ হতে পারবে।কিন্তু ওই ব্যক্তি তৃণমূল সম্পর্কে অনীহা থাকতেই পারে। তিনি কেনই বা তৃণমূল কংগ্রেসকে সাহায্য করবে? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ” ওই ব্যক্তি তৃণমূল সমর্থক হতেও পারে, নাও হতে পারে। ওই ব্যক্তির কোন সমস্যা থাকতে পারে নাও থাকতে পারে। কিন্তু সমস্যা তো শুধু আর কোনো নির্দিষ্ট দলের সমর্থকদের হয় না সব দলেরই হতে পারে। সেই জায়গা থেকে তাদের দলের তরফে অনুরোধ করা হবে সমস্যা মাধানের জন্য। যথাযথ সম্মান দিয়েই আমরা তার সাহায্য চাইবো।”অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ব্লকে তৃণমূল এবং যুব সংগঠনের মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দিচ্ছে। কোথাও কোথাও ব্লক ভিত্তিক মূল সংগঠনের সভাপতি এবং কার্যকারী সভাপতি রয়েছে। অন্যদিকে, যুব সংগঠনের সভাপতি এবং কার্যকারী সভাপতি রয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সভাপতি এবং কার্যকারী সভাপতি মধ্যে অনেক সময়ই সহবস্থান হচ্ছে না। মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে। গোষ্ঠী কোন্দল বাড়ছে। সমস্যায় পড়ছে দল। সেক্ষেত্রে যেখানে সভাপতি যথেষ্ট কর্মক্ষম সেখানে কার্যকারী সভাপতি রাখার দরকার নেই। আবার যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে সভাপতি বা কার্যকারী সভাপতি দু’জনকেই রাখা হবে। সেটা সিদ্ধান্ত নেবে মূল সংগঠন। মঙ্গলবারের বৈঠকে বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর।