বাংলায় লকডাউন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত, ১০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
জ্যোতির্ময় দত্ত, কলকাতাঃ আরও অন্তত দু’সপ্তাহ বাড়ানো হোক লকডাউন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন আর্জি জানালেন অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। শনিবার সকাল ১১ টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান-সহ প্রায় ১২টি রাজ্য অন্তত আর দু’সপ্তাহ অর্থাৎ ৩০এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। সেই আর্জির সঙ্গে সহমত প্রধানমন্ত্রীও। এদিন এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় একটা সূত্র।আপাতত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ল লকডাউন। যদিও সরকারি ঘোষণা এখনও করা হয়নি, তবে দু’সপ্তাহ লকডাউনে বাড়াতে কেন্দ্র-রাজ্য সহমত। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পর নবান্নে একথা ঘোষণা করলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এদিন তিনি বলেন, “৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন আমাদের এখানেও চলবে।” অর্থাৎ, আরও ১৬ দিন বাড়ছে লকডাউন। একই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যে ১০ জুন পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। সরকারি, বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এই সময়ে বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রিলের শেষে ফের একবার মিড ডে মিল বিলি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়। বেশির ভাগ রাজ্যই লকডাউন বাড়ানো হোক বলে দাবি করে। এর পরেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে এই রাজ্যে। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও বন্ধ থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের কথায় স্পষ্ট যে, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও খুলবে না স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। একেবারে গরমের ছুটি কাটিয়ে তবেই খুলবে স্কুল, কলেজ। রাজ্যে অনেক স্কুল, কলেজেই গৃহহীনদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়াও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই খোলার আগে স্যানিটাইজেশন করা দরকার হবে। এসব মাথায় রেখেই ১০ জুন পর্যন্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল সরকার। অন্যদিকে, করোনা মোকাবিলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে রাজ্যে এবার একটু বেশিক্ষণ খোলা থাকবে বাজার ও খাদ্যপণ্যের দোকান। দোকানগুলি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে বলে আজ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেজন্য সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে দোকানে ভিড় না করার অনুরোধও করেছেন তিনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে বলে শনিবার অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে আজ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ওই ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং আইসিএমআর-এর প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁরা কোনও আপত্তি করেননি। বাংলায় করোনাভাইরাসে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যাই বা কত তা নিয়ে গোড়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। বিরোধী শিবিরের অনেকের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, তার সঙ্গে রাজ্যের পরিসংখ্যানের ফারাক হচ্ছে। তাঁদের এও অভিযোগ, মৃত ও আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করছে। এবং এই সেই কারণেই এখন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ল্যাবরেটরি নাইসেডে বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সে সবেরই এদিন জবাব দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেক ফেক নিউজ হচ্ছে। আমি আজকে প্রধানমন্ত্রীকেও বলেছি। ওদের কাছে ভিডিও আছে, দরকার হলে ক্রস চেক করে নিতে পারেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘ওষুধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা সাড়া দিচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে রেকারিং প্রবলেম নিয়ে আসছেন। তাঁদের হয়তো নিউমোনিয়া রয়েছে, ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া রয়েছে বা অন্য কোনও কঠিন অসুখ রয়েছে। কারও বা মৃত্যুর সময়ে কিংবা মৃত্যুর পর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসছে। আমরা সেগুলোকে অডিট কমিটির কাছে পাঠাচ্ছি। সেই কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরই আমরা মৃতের সংখ্যা বলছি।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন এও বলেন, ‘দুটো-একটা নম্বর (পড়ুন মৃতের সংখ্যা) বাড়লে বা কমলে কী যাবে আসবে! কিন্তু আমরা তথ্য গোপন করি না।’ করোনার জন্য রাজ্যে যে এলাকাগুলিতে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলিকে হটস্পট বলতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। বরং এ নিয়ে মানুষের মধ্যে যাতে আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি না ছড়ায় সে জন্য শব্দচয়নে অনেকটাই সংযত নবান্ন। শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা এগুলোকে হটস্পট বলছি না। কেউ কেউ নিজের মতো করে শব্দ বানিয়ে নিচ্ছেন। তার চেয়ে এটাকে মাইক্রো প্ল্যানিং অফ দ্য গভর্মেন্ট বলতে পারেন।’