সর্বভারতীয় স্তরের আমলাদের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণের নিয়ম ক্যাডার রুলস-এ বদল আনতে চরম পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অবস্থায় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গত ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সাতদিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার আবার প্রধানমন্ত্রীকে একই বিষয় নিয়ে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী । এই নিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার চিঠি লিখলেন তিনি । এদিন দ্বিতীয় চিঠিতে দানবীয় আখ্যা দিয়ে এই সংশোধনী থেকে কেন্দ্রকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়েছেন মমতা । কেন্দ্রের এই সংশোধনী প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর একেবারে পরিপন্থী বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি । ১৯৫৪ সালের আইএএস (ক্যাডার) রুল সংশোধনী নিয়ে লেখা এই চিঠিতে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, আমলারা রাজ্য প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের প্রতিটি মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয় । কেন্দ্র তাঁদের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করলে বহু কাজের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হবে । কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরোধও আরও বাড়বে । বিষয়টিকে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কোনও আমলাকে কেন্দ্র যদি সরিয়ে নেয়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে রাজ্যের অধিকার খর্ব করার সামিল । যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষেত্রেও তা বিপজ্জনক । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, আইএএস আইন সংশোধনীতে আমলাদের মধ্যে ‘ফিয়ার সাইকোসিস’ তৈরি হবে, যা তাঁদের কাজের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করবে । তাছাড়া এই সংশোধনীর ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে যাবে । এদিনের দু’পাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধরা যাক একজন আইএএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে দেশের যেকোন জায়গায় পোস্টিং দিতে চায়, এক্ষেত্রে কেন্দ্র সেই অফিসারের ব্যক্তিগত অনুমতি নিতে বাধ্য নয় । এমনকি যে রাজ্যের হয়ে সেই অফিসার কাজ করছিলেন, সেই সরকারের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই নয়া সংশোধনীতে । এই পদ্ধতি চালু হলে দেশে অতিমাত্রায় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হবে, কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে ।”প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে জানানো হয় সেন্ট্রাল ডেপুটেশন রিজার্ভে থাকা অফিসারদের সংখ্যা বাড়াতে চায় তারা । তার জন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকার যোগ্য আধিকারিকদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের জন্য উপলব্ধ করুক । বর্তমান সার্ভিস রুলের এই সংসশোধনীতেই অসন্তুষ্ট মমতা । কারণ, এই নয়া সংশোধনীর জেরে ফের একবার আইএএস আধিকারিকদের নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়ে যাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে । আমলাদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে পুরোপুরি কেন্দ্রের হাতে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের ।