আইন বলছে, ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভপাতে অনুমতি দেওয়া যাবে না। গত বছর গর্ভপাত করানোর সময়সীমায় পরিবর্তন এনেছে মোদি সরকার। এর আগে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনুমতি মিললে ১৮ সপ্তাহের আগে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হত। গত বছর তা বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করা হয়েছে। ২০২১ সালের গর্ভপাত আইন সংশোধনী অনুযায়ী, ধর্ষিতা, নাবালিকা, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে অথবা স্বামী মারা গিয়েছেন বা ডিভোর্স হয়েছে, এমন প্রসূতিদের গর্ভপাত করানোর জন্য ২৪ সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। গর্ভস্থ ভ্রূণের বিশেষ ত্রুটি থাকলেও করানো যাবে গর্ভপাত। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এই আইন প্রযোজ্য। সব ক্ষেত্রেই একটি মেডিক্যাল বোর্ড শারীরিক অবস্থা দেখে চূড়ান্ত অনুমতি দেবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে, যেখানে ৩৪ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, উত্তর কলকাতার এক প্রসূতি দিনকয়েক আগে রাজ্য সরকারের কাছে গর্ভপাতের আবেদন জানান। আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, তিনি ৩৪ সপ্তাহের গর্ভবতী। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে চলছেন। তবে সম্প্রতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায়, তাঁর সন্তানের স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা রয়েছে। প্রসূতিরও শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। সন্তান জন্মালে সদ্যোজাত এবং প্রসূতির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। শুধু তা নয়। দু’জনের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সে কারণেই তিনি গর্ভপাতের আরজি জানান। কিন্তু যেহেতু দেশের আইন অনুযায়ী ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া যায় না তাই রাজ্য সরকারও ওই প্রসূতির আবেদন খারিজ করে। তার জেরেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। বৃহস্পতিবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের এজলাসে মামলার শুনানি হয়। সেই শুনানিতেই বিচারপতি প্রসূতিকে প্রশ্ন করেন, তিনি সত্যিই গর্ভপাত করাতে চান কিনা? উত্তরে প্রসূতি জানান শারীরিক অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রসূতির আইনজীবী সুতপা সান্যাল জানান, দীর্ঘদিন সন্তানের পরিকল্পনা করেছিলেন মহিলা। তবে কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সবরকম ব্যবস্থার পর অন্তঃসত্ত্বা হন। তবে গর্ভধারণ করার পর থেকেই অসুস্থতা বাড়তে থাকে প্রসূতির। গর্ভস্থ ভ্রূণের শারীরিক অবস্থাও ভাল নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে দু’জনেরই। তাই আদালতের থেকে গর্ভপাতের অনুমতি চান ওই মহিলা। এরপরেই হাইকোর্টের গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এদিন হাইকোর্ট এটাও জানিয়ে দিয়েছে, প্রসূতি এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ৩৪ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হলেও গর্ভপাতের ফলে প্রসূতির শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তার দায় নেবে না কলকাতা হাইকোর্ট।