শুরু হয়ে গেল ৪৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। সোমবার এই বইমেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে শুরু হল ৪৫ তম কলকাতা বইমেলা। এবারের থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। সেন্ট্রাল পার্কের নাম পরিবর্তন। এবার থেকে ‘বইমেলা প্রাঙ্গণ’ হিসাবেই পরিচিত হবে পার্কটি। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। বাংলা ও বাংলাদেশ নিয়ে আবেগে ভাসলেন। বলেন, “দুই দেশে কোনও বিভেদ নেই। তারা একে অপরের চিরসাথী। সীমানা দিয়ে দুই বাংলাকে আলাদা করা যায় না।” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সকলের শুভকামনাও করেন তিনি। সকলকে কমপক্ষে একবার বইমেলায় আসার আহ্বান জানান। এরপর ৪৫ বার ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবারের বইমেলায় মুখ্যমন্ত্রীর ১০টি বই প্রকাশ হওয়ার কথা। এদিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বইমেলায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুজিত বসু, মালা রায় এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এদিন প্রথমে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র স্টলের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর কলকাতা পুলিশের স্টল ঘুরে দেখেন। স্টলে থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের স্টলেও যান তিনি। স্টলে থাকা বইপত্র দেখেন। জানা গিয়েছে, এবার মোট ৬০০টি স্টল রয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনের স্টল ২০০টি। মেলায় ঢোকা ও বেরোনোর জন্য মোট ৯টি তোরণ রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি বঙ্গবন্ধুর লেখা বইয়ের আদলে। বঙ্গবন্ধুর নামে একটি
গেটও রয়েছে। ২টি সত্যজিৎ রায় ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে। একটি বিশ্ববাংলা গেটও রয়েছে। মেলার ২টি হলের নাম দেওয়া হয়েছে সুভাষচন্দ্র বসু ও ঋষি অরবিন্দর নামে। লিটল ম্যাগাজিনের প্যাভিলিয়ানে হবে কবি-সম্পাদক শম্ভু রক্ষিত ও প্রভাত চৌধুরী নামে। কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নামে রয়েছে মুক্তমঞ্চ। বইমেলার জন্য এবারও বিশেষ বাসের ব্যবস্থা হয়েছে। বিধাননগরের অটোচালকদের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল সাহায্যের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এবারই প্রথম বইমেলায় অংশ নিচ্ছে ইরাক। এবারও সিইএসসির সাহায্যে থাকছে বইমেলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। মেলা পরিবেশবান্ধব হল কিনা, সে বিষয়ে খেয়াল রাখবে বনদপ্তর। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষই এবার বইমেলামুখী হবে বলেই আশা প্রায় সকলের। সেকথা মাথায় রেখে নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মেলাচত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হল ভারতের দুটি সবচেয়ে প্রাণবন্ত উৎসব। শুধুমাত্র অনুপস্থিত একটি আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গীত উৎসব, আমরা আগামী বছর থেকে সেই অভাব পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’ যদিও এই ধরণের “আন্তর্জাতিক মেলা” করতে গেলে একক কোনো ব্যক্তির ইচ্ছের উপর হয় না।বিগত কয়েক বছর ধরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে, মুখ্যমন্ত্রী তার নতুন নাম রেখেছেন ‘বইমেলা প্রাঙ্গন’। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গও তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি । নতুন করে আর যুদ্ধ চাই না। ভারত বরাবরই শান্তির পক্ষে থেকেছে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সময়ও ভারতের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আপনারা জানেন আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি । এই যুদ্ধ বন্ধে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিক । যুদ্ধ চাই না আমরা । আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে ।’’