উনিশ বছরের তরতাজা এক যুবকের লোকো পাইলট হওয়ার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটল! মঙ্গলবার দুপুরে উলুবেড়িয়ার হীরাপুর কাঁটাখালি খেয়াঘাটের কাছে হুগলি নদী থেকে উদ্ধার হল ১৯ বছরের হার্দিক দাসের দেহ। মোমিনপুরের জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিকের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া হার্দিক গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এদিন তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার রাতেই লালবাজার থেকে খবর পেয়ে হার্দিকের বাবা হিমাদ্রি দাস উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে ছুটে যান। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হার্দিকের পোশাক, জুতো, পায়ের বিশেষ চিহ্ন দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন বাবা। মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা মনে করছেন, মোবাইল খুইয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন হার্দিক। তা থেকেই তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। যদিও অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বেহালা থানার সেনহাটির ফ্ল্যাট থেকে ট্রেনের ছবি তোলার জন্য হার্দিক দমদম স্টেশনে যান। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হলেও আর ঘরে ফেরেননি তিনি। বিকেল পর্যন্ত বিষয়টিকে তেমন আমল না দিলেও রাত বাড়তেই উদ্বেগ দেখা দেয় পরিবারে। পেশায় ব্যাঙ্ক অফিসার হার্দিকের বাবা সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই দমদম ও কলকাতা স্টেশন, আর জি কর হাসপাতাল সহ শহরের সম্ভাব্য একাধিক স্থানে ছেলের খোঁজে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু তবুও ছেলের কোনও হদিশ মেলেনি। রাতেই হার্দিকের পরিবার স্থানীয় বেহালা থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করেছেন, যার ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছিলেন কলকাতা পুলিসের মিসিং পার্সন স্কোয়াডের গোয়েন্দারা। উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের এক সূত্র জানাচ্ছে, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, হার্দিকের দেহে আপাতদৃষ্টিতে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই ডুবে যাওয়াকে ফরেন্সিক বিজ্ঞানের ভাষায়, ‘অ্যান্টি মর্টেম ড্রাউনিং’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত দুর্ঘটনার জেরে কেউ জলে পড়ে গেলে অথবা আত্মহত্যা করতে জলে ঝাঁপ দিলে এই ধরনের মৃত্যু হতে পারে। উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে বুধবার দুপুরে হার্দিকের মরদেহ নিয়ে বেহালার বাড়িতে ফেরেন পরিবারের সদস্যরা। তারপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হয়। এদিন বিকেলে পি-৬৬ বেহালার সেনহাটিতে হার্দিকের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল জটলা। হিমাদ্রিবাবুর সহকর্মী থেকে আবাসনের বাসিন্দারা পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন। তরতাজা ছেলের শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফেরা হার্দিকের মা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।