জ্যোর্তিময় দত্ত, কলকাতাঃ বৌবাজারে মেট্রোর বিপর্যয় নিয়ে ওই এলাকার মানুষের উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পরিস্থিতি এইমুহুর্ত পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু আরও বেশি এলাকার মাটি বসে পরিস্থিতি আরো ঘোরালো আকার নিয়েছে বা আরও নিতে পারে বলে আশঙ্কা। আজ নবান্নে বউবাজার মেট্রো সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর গঠিত কোর কমিটির বৈঠক বসে। সেখানেই একথা জানিয়ে দিয়েছেন কেএমআরসিএলের কর্তারা। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ক্রমশ নতুন নতুন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দেওয়ায় রাজ্য প্রশাসন এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বৈঠকে এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার পথনির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে নবান্নের খবর। রাজ্যের পুর নগরউন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসম্ভব কম করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর ত্রান এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা হবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।ওরা পুরসভার কাছে দুশো গাড়ি জল চেয়েছিল। তা দেওয়া হয়েছে। এখন ওরা বলছে জল ঢেলে ফাটল ঠেকাবে। এটা টেকনিক্যাল ব্যাপার।ওরা বুঝবে।’ বউবাজারে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট এর পিছনের অংশ নতুন নতুন এলাকায় মাটি বসে যাচ্ছে বলে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যেহেতু মেট্রোরেলের কাজের জন্য এই বিপর্যয় তাই তা রোধ করার উপায় তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে বৈঠকে রাজ্য সরকারের তরফে সেরকমই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।তবে রাজ্য সরকার এবং পুরসভার তরফের সবরকম সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই এলাকায় ধ্বংসস্তূপ সরানো বা নতুন নির্মাণের ব্যাপারে মেট্রো কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদের উপরেই ভরসা রাখছে রাজ্য। পুর মন্ত্রী বলেন, ‘যতক্ষণ না কে এমআরসিএল ল্যান্ড স্টেবিলিটি সার্টিফিকেট দেবে ততক্ষণ পুরসভা ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করতে পারবেনা।নতুন করে নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’একই সঙ্গে বিপর্যস্ত বাসিন্দাদের ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে কে এম আর সি এল কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্যের তরফে।পুরো মন্ত্রী জানান দুই-তিন দিনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিয়ে দেবে বলে এদিন আশ্বাস দিয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এই বিপর্যয় যারা গৃহহীন হয়েছেন তাদের সকলকেই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। অনেক বাসিন্দার বাড়ি ভেঙে পড়ায় ব্যাংকের পাসবুক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা ঐসব বাসিন্দাদের শংসাপত্র দেবেন। তার ভিত্তিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করে যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট পরিবার ব্যাংক থেকে তুলতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে বলে এদিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথির ডুপ্লিকেট কপি কিভাবে সংগ্রহ করতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। নবান্নের বৈঠকে মুখ্যসচিব মলয় দে, কে এম আর সি এল এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার, স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়,রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক বীরেন্দ্র প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।