সাত সদ্যোজাতকে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী এক নার্স। শুক্রবার ম্যানচেস্টার ক্রাউন আদালতের বিচারক লুসি লেটবি নামে কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালের ওই নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আগামী সোমবার তার সাজা ঘোষণা করা হবে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা দীর্ঘমেয়াদী জেল হতে পারে শিশুঘাতী নার্সের। ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিশু সিরিয়াল কিলার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন লুসি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা ইউনিটের নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী লুসি লেটবি। ২০১৫-১৬ সালে রাতের শিফটে ডিউটি করার সময়েই নবজাতকদের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন ও বাতাস ঢুকিয়ে এবং বাকিদের জোর করে দুধ খাইয়ে হত্যা করেন। কয়েকজন শিশুর উপর একাধিকবার আক্রমণ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন লুসি। আচমকাই শিশু মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি পুলিশের গোচরে আনেন তাঁরা। তদন্তে নেমে ২০১৮ সালে প্রথমবার হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা ইউনিটের নার্স লুসিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু জামিন পেয়ে যান ৩৩ বছর বয়সী নার্স। এর পরে ২০১৯ সালে ফের গ্রেপতার করা হয়। তল্লাশির সময়ে লুসির বাড়ি থেকে একটি চিরকূটও উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। ওই চিরকূটে লেখা ছিল, ‘আমি একরত্তি নিরাপরাধ শিশুদের খুন করেছি, কারণ তাদের যত্ন নেওয়ার মতো যথেষ্ট ভালমানুষ আমি নই। আমি ভীষণ খারাপ মানুষ। আমি শয়তান, আমিই এ কাজ করেছি (আই অ্যাম ইভিল, আই ডিড দিস)।’ তদন্তে উঠে আসে, মূলত যমজ সদ্যোজাতদের শিকার হিসেবে বেছে নিয়েছিল লুসি।
ব্রিটিশ এই নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করতে সহায়তা করেন যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ রবি জয়রাম। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ইংল্যান্ডের চেস্টার হাসপাতালে। এই হাসপাতালের নার্স লুসি লেটবির বিরুদ্ধে ইচ্ছাবশত শিশু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আগে সতর্ক হলে কিছু প্রাণ বাঁচানো যেত বলে উদ্বেগ প্রকাশ ডঃ রবি জয়রামের। ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে অভিযুক্ত নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সোমবার রায় ঘোষণা হবে। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে মোট ১৩টি শিশুকে হত্যার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল। শিরা-ধমনিতে এয়ার, ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োগ করত। শিশুদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে বাতাসের আধান, অতিরিক্ত মাত্রায় দুধ বা তরল পান করিয়ে দিতেন বলেই অভিযোগ।অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ২০১৫ সাল থেকেই সন্দেহের তীর যায়। ওই বছর ৩টি শিশু মারা গিয়েছিল। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসে। ২০১৭ সালে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ট্রাস্ট এর ডাক্তারেরা ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। তারপর তদন্ত শুরু করে লেটবিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডঃ রবি জয়রাম। অভিযুক্ত নার্সের দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তবে ঘটনাটি উদ্বেগজনক। শিশুদের হত্যা করার মানসিকতা একজন নার্সের কিভাবে তৈরি হয় তাই উদ্বেগের বিষয়।