জেলা

অবশেষে ৭ দিন পর জিয়াগঞ্জ খুনের কিনারা, গ্রেপ্তার রাজমিস্ত্রি

৭ দিন পর জিয়াগঞ্জে সপরিবার শিক্ষক খুনের কিনারা করল পুলিস। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানা এলাকার সাহাপুর গ্রাম থেকে সোমবার রাতে উৎপল বেহরা নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে তারা। মাধব বেহরার ছেলে উৎপল পেশায় রাজমিস্ত্রি। মোবাইল টাওয়ার দেখে তার বাড়ি থেকেই উৎপলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। পুলিসের দাবি শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি এবং ছেলেকে খুনের কথা প্রাথমিক জেরায় স্বীকার করেছে উৎপল। তাকে আদালতে তুলে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় পুলিস। মুর্শিদাবাদের এসপি মুকেশ কুমার মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, গত আট তারিখ জিয়াগঞ্জের বারালা গ্রামে নিজের ঘরেই খুন হন সপরিবার বন্ধুপ্রকাশ পাল। ঘরের মধ্যেই মেলে ধারাল অস্ত্র। তল্লাশিতে পাওয়া যায় নিহত বিউটি পালের হাতে লেখা চিঠি, বেশ কিছু বিমার কাগজ এবং ব্যাঙ্কের নথিপত্র। একটি রক্তমাখা জামা। এছাড়া রক্তমাখা একটি বিমার নথি থেকেই খুনের কিনারা করতে পেরেছেন তাঁরা। এসপি আরও জানালেন, বন্ধুপ্রকাশ জিয়াগঞ্জে থাকলেও সাগরদিঘির সাহাপুর গ্রামে শিক্ষকতা করতেন। সেই সূত্রেই মাধব এবং উৎপলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। কর্মসূত্রে উৎপল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় থাকে। একাধিক লগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ। শিক্ষকের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে বিমা করতেন। মাধব এবং উৎপলের সঙ্গে সেব্যাপারেই যোগাযোগ। মাধব তাঁর কাছ থেকে বিমা করিয়েছিলেন। বন্ধুপ্রকাশের বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পলিসি হোল্ডাররা নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জমা দিলেও সেই টাকা জমা পড়েনি। রসিদও দিতেন না ঠিক মতো। কিন্তু স্থানীয় শিক্ষককে সম্মান জানিয়েই তাঁরা নিশ্চুপ ছিলেন। পলিসি হোল্ডারদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে মানসিক চাপেও ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ। তাঁর নামে বেশ কিছু আর্থিক গন্ডগোলের প্রমাণ মিলেছে। মাধবকেও প্রথমবার বিমার রসিদ দিলেও দ্বিতীয়বার দেননি তিনি। ২৪০০০ টাকা বন্ধুপ্রকাশের কাছে পেতেন মাধব। সেই টাকা ফেরত চেয়ে ফোন করলেই দুর্ব্যবহার করতেন বন্ধুপ্রকাশ। উৎপলের কোনও অপরাধ রেকর্ড নেই। কিন্তু বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় বন্ধুপ্রকাশের উপর বিরক্ত ছিল সে। সেজন্যই তাঁকে খুনের ছক কষে উৎপল। এসপি জানালেন, তিন তারিখ এগরা থেকে বোনের বাড়ি যায় উৎপল। সেখানে স্টেশনের কাছ থেকে খুনের অস্ত্র জোগাড় করে সে। তারপর ফের এগরা ফিরে যায়। এরপর নবমীর রাতে বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি গিয়েছিল সে। কিন্তু এলাকা চিনলেও বাড়ি চিনতে পারেনি বলে ফিরে যায়। তারপর বকেয়া টাকা চেয়ে গত আট তারিখ, বিজয়া দশমীর দিন সকাল ১০.‌৩৭ মিনিটে বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করেছিল উৎপল। বন্ধুপ্রকাশ তাকে বাড়ির ঠিকানার নির্দেশ দেন। এরপর দুপুর ১২.‌০৬ বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি পৌঁছয় উৎপল। সবাই পরস্পরকে চিনতেন। বন্ধুপ্রকাশই দরজা খুলেছিলেন। তিনি পিছন ফিরতেই তাঁকে পিছন থেকে হামলা করে উৎপল। তখন ফোনে কথা বলছিলেন বিউটি। কারণ তাঁর মোবাইলের কললিস্ট দেখে জানা গিয়েছে ১২.‌০৬ মিনিট পর্যন্ত কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর বিউটি এবং তাঁদের ছেলেকে খুন করে উৎপল। মাত্র মিনিট পাঁচেকের ব্যবধানে দুপুর ১২.‌০৬–১২.‌১১ মিনিটের মধ্যে তিনটি খুন করে রক্তমাখা জামা খুলে অন্য জামা পরে পালায়। সেসময় তাকে বাড়ি থেকে বেরতে দেখেছিলেন কয়েকজন প্রত্যদর্শী। উৎপল যখন পালাতে যায় সেসময় দুপুর ১২.‌১১ মিনিটে দুধবিক্রেতা বাড়িতে ঢুকছিলেন। তাঁকে ধাক্কা মেরেই চম্পট দেয় উৎপল।
এদিকে, ছেলেকে নির্দোষ বলে দাবি করে উৎপলের মায়ের অভিযোগ, টাকা চেয়ে ফোন করেছিল বলেই তাঁর ছেলেকে মিথ্যে অভিযোগে ধরেছে পুলিস।