এসে গেল জগদ্ধাত্রী পুজো। চন্দননগর থেকে কৃষ্ণনগরে শুরু হয়ে গিয়েছে হইচই। দুই নগরীতেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছে। সবে কেটেছে চতুর্থীর রাত। এরপর সকলের চোখ রয়েছে নবমী তিথির দিকে। মূলত, দেবী জগদ্ধাত্রীকে নবমী তিথিতেই বিশেষ আরাধনা করা হয়। দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে যেমন সকলের নজর থাকে অষ্টমী তিথির দিকে, তেমনই জগদ্ধাত্রী তিথি ঘিরে সকলের নজর থাকে নবমীর দিকে। চলতি বছরে জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী তিথি পড়েছে রবিবার। কৃষ্ণনগরের রাজা স্বপ্নাদেশ পান… পুজো ঘিরে কোন কাহিনি প্রচলিত? জগতের পালিকা হলেন দেবী জগদ্ধাত্রী। তিনি দেবী দুর্গার আর এক রূপ। দেবী দুর্গা হলেন সিংহবাহিনী দশভূজা, আর দেবী জগদ্ধাত্রী হলেন সিংহবাহিনী চতুর্ভুজা। মহিষাসুর বধের পর দেবতাগণ অহংকারী হয়ে ওঠেন। তাঁরা ভুলেই যান যে দেবী জগদ্ধাত্রীর শক্তিতেই তাঁরা শক্তিমান। তা দেবী জগদ্ধাত্রী বুঝতে পারেন এবং দেবতাদের অহংকার নাশের উদ্দেশ্যে তাঁদের শক্তির পরীক্ষা করেন। দেবতাগণ সেই পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। দেবতাগণ তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন এবং দেবী জগদ্ধাত্রীকে সকল শক্তির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে গ্রহণ করেন। কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিত হন। অন্যদিকে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর নাকি কৃষ্ণনগরে প্রথম, তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। আজ দেখা যাক, কৃষ্ণনগরে এই পুজোর শুরু নিয়ে কোন কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। কথিত রয়েছে, এককালে নদিয়ার চাষা পাড়ার পুজোর দায়ভার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তখনই দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন। অনেকের মতে, এই স্বপ্নাদেশের কাহিনি সঠিক নয়। রাজার বাড়ির পুজো তিনি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আরেকটি সূত্র বলছে, একবার মীরকাশিমের আদেশে কারাগারে বন্দি হন সপুত্র কৃষ্ণচন্দ্র। এরপর তিনি মুক্তি পান। নৌকায় কৃষ্ণনগর ফেরার সময় তিনি দেখেন, দুর্গাপুজোর প্রতিমা ভাসান হচ্ছে। দিনটি ছিল বিজয়া দশমী। তাঁর মনে দুঃখ হয়। বন্দি থাকার ফলে তাঁর দুর্গাপুজো করা হয়নি সেবছর। কথিত রয়েছে, সেই রাতেই রাজা পান জগদ্ধাত্রীর স্বপ্নাদেশ। তারপর থেকেই কৃষ্ণনগরে রাজবাড়িতে পুজো শুরু হয়।দেখে নেওয়া যাক, এবছরে জগদ্ধাত্রী পুজোর নির্ঘণ্ট।
জগদ্ধাত্রী পুজোর নির্ঘণ্ট:-
আগামিকাল ৭ নভেম্বর ২০২৪ পড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর ষষ্ঠী তিথি। আগামিকাল লক্ষ্মীবার বৃহস্পতিবারে রয়েছে এই তিথি। সপ্তমী তিথি পড়েছে ৮ নভেম্বর। শুক্রবার এই তিথি রয়েছে। অষ্টমী তিথি পড়েছে ৯ নভেম্বর, শনিবার। ১০ নভেম্বর পড়েছে নবমী তিথি। দেখে নেওয়া যাক জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী তিথি কখন থেকে শুরু হচ্ছে।
জগদ্ধাত্রী পুজো ২০২৪ নবমী তিথি:-
জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী তিথি ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকেই পড়ে যাচ্ছে। ৯ নভেম্বর শনিবার, সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিট ৪০ মিনিট থেকে এই তিথি শুরু হচ্ছে। ১০ নভেম্বর বিকেল ৪ টে ৩৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ড পর্যন্ত এই তিথি থাকবে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে –
অষ্টমী তিথি শুরু– বাংলা– ২২ কার্তিক, শুক্রবার, ইংরেজি– ৮ নভেম্বর, শুক্রবার। সময়– রাত ১১টা ৫৮ মিনিট।
অষ্টমী তিথি শেষ এবং নবমী তিথি শুরু– বাংলা– ২৩ কার্তিক, শনিবার, ইংরেজি– ৯ নভেম্বর, শনিবার। সময়– রাত ১০টা ৪৬ মিনিট। (সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পুজো করা যায় কিন্তু বারবেলানুরোধে ৭টা ১২ মিনিট গতে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রথম কল্পীয় সপ্তমাদি কল্পে অষ্টমী বিহিত শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজো করার শুভ সময়।)
নবমী তিথি শেষ এবং দশমী তিথি শুরু– বাংলা– ২৪ কার্তিক, রবিবার, ইংরেজি– ১০ নভেম্বর, রবিবার। সময়– রাত ৯টা ২ মিনিট। (সকাল ৯ টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে প্রথম কল্পীয় সপ্তমাদি কল্পে নবমী বিহিত শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী পুজো করার শুভ সময়।)
দশমী তিথি শেষ– বাংলা– ২৫ কার্তিক, সোমবার, ইংরেজি– ১১ নভেম্বর, সোমবার। সময়– রাত ৬টা ৪৭ মিনিট। (সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কিন্তু বারবেলানুরোধে সকাল ৭ টা ১৩ মিনিটের মধ্যে পুনরায় ৮টা ৩৫ মিনিট গতে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রথম কল্পীয় সপ্তমাদি কল্পে দশমী বিহিত শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী দেবীর দশমী বিহিত পুজো করার শুভ সময়।)
দেবী জগদ্ধাত্রীর রূপ:-
দেবী জগদ্ধাত্রী চতুর্ভূজা। তাঁর হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, ধনুক, বাণ। তাঁর বাহন সিংহ। তিনি করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তিরূপী অসুরকে দমন করেন। তাই সিংহের নিচে থাকে হাতির রূপ। শাস্ত্র মতে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে দেবীর পুজো হয়। অগ্নি, পবন, বরুণ, চন্দ্র এই চার দেবতার দর্প চূর্ণ করতেই দেবীর আবির্ভাব বলে কথিত রয়েছে।