দেশ

‘সংখ্যালঘু’ তকমা ফিরে পাচ্ছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়!  বড় সিদ্ধান্ত সুপ্রিমকোর্টের

সুপ্রিমকোর্টের রায়ে খুলে গেল আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংখ্যালঘু’ তকমা ফিরে পাওয়ার রাস্তা। ১৯৬৭ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে শীর্ষ আদালতই জানিয়েছিল, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ‘সংখ্যালঘু’ তকমা দাবি করতে পারে না। কিন্তু শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ওই রায় খারিজ করে দিল। সাত সদস্যের বেঞ্চ ৪:৩ বিভাজনের রায়ে জানিয়ে দিল, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ‘সংখ্যালঘু’ তকমা দাবি করতেই পারে। তবে, ঐতিহ্যমণ্ডিত ওই বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যালঘু তকমা পাবে কিনা, সেটা ঠিক করবে অন্য একটি বেঞ্চ। ১৯৬৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়েই সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হারিয়েছিল এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেসময় এস আজিজ বনাম কেন্দ্র মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানায় কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করতে পারে না। তবে ১৯৮১ সালে তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে সেটিকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু ২০০৬ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্টে ইন্দিরা গান্ধীর আনা সেই সংশোধনীকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দেয়। পালটা সুপ্রিম কোর্টে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই মামলায় নিজের কর্মজীবনের শেষদিনে ৪:৩ বিভাজনের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মত নিয়ে রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। অন্য দিকে, বিরুদ্ধমত পোষণ করে স্বতন্ত্র রায় দেন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র। প্রধান বিচারপতির রায়ে ১৯৬৭ সালের সিদ্ধান্ত খারিজ করা হয়েছে। যার অর্থ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যলয়ের সংখ্যালঘু তকমা দাবি করায় কোনও বাধা রইল না। তবে সরাসরি তকমা ফেরানো হবে কিনা, সেটা সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ নির্ধারণ করেনি। সেটার জন্য একটি পৃথক তিন বিচারপতির নতুন বেঞ্চ গঠন করা হবে। সেই বেঞ্চই সিদ্ধান্ত নেবে।

ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সংবিধানের 30নং অনুচ্ছেদের অধীনে এএমইউকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে কি না সে বিষয়ে রায় সংরক্ষণ (রিজার্ভ) করেছে । প্রধান বিচারপতি এদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় পড়ে বলেন যে, আজিজ বাশা মামলায় এএমইউ-এর সংখ্যালঘু মর্যাদা অস্বীকার করার যে দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে । তবে এই রায়ে উঠে আসা নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে এএমইউ-এর সংখ্যালঘু মর্যাদা নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এই মামলাকে তিন বিচারপতির বেঞ্চের উপর ছেড়ে দেন প্রধান বিচারপতি । সিজেআই বলেন যে, একটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান অবশ্যই সংখ্যালঘুদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হতে হবে ৷ পাশাপাশি সংবিধান অনুযায়ী সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান ধারা 30-এর অধীনে সমান সুরক্ষা পাবে । তাঁর কথায়, আদালত একটি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যালঘু মর্যাদা অস্বীকার করতে পারে না, কারণ এটি একটি সংসদীয় আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত । এই ধরনের স্থাপনার আশেপাশের বিভিন্ন কারণ এবং অন্যান্য দিক বিবেচনা করা উচিত ।প্রধান বিচারপতি আরও বলেন যে, শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেই সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে এমনটা নয় । প্রতিষ্ঠানটিকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তার প্রশাসন সংখ্যালঘুদের উপরই নির্ভরশীল তা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই । সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে জোর দেওয়া হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি সংখ্যালঘুদের স্বার্থে কাজ করে কি না সেটাই বড় পরীক্ষা । বিস্তারিত রায় পরে আপলোড করা হবে ।বিচারপতি কান্ত তাঁর ভিন্নমত পড়ে বলেন যে, আজিজ বাশা মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এএমইউ একটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান নয় । এএমইউ-এর চরিত্র নিয়ে তদন্ত পুনরায় শুরু করার দরকার নেই বলে মত তাঁর । যেভাবে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলাকে বর্তমান সাত বিচারপতির বেঞ্চে রেফার করেছিল তার সমালোচনা করেন বিচারপতি কান্ত ৷