কলকাতাঃ হেলে যাচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন মেডিকেল কলেজের এমসিএইচ ভবন। পিলার এবং দেওয়ালে ক্রমেই চওড়া হচ্ছে ফাটল। হেরিটেজ এই ভবনটির ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর পিলারের উপর একাধিক জায়গায় বড়সড় ফাটল দেখা গিয়েছে। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, এই আইসিইউ-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ রয়েছে এই বিল্ডিং-এ। যেখানে সব মিলিয়ে প্রায় তিনশ’র বেশি রোগী বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আর তাতেই রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের। ঘটনায় পূর্ত দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। ইতিমধ্যেই পূর্ত দফতরকে চিঠি পাঠিয়ে ভবন কতটা নিরাপদ বা কেন এমন ঘটনা ঘটল তা জানতে চাওয়া হয়েছে।তবে কেমন এমন ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখলে মাসচারেক পিছনে যেতে হবে। সেই সময় এমসিএইচ ভবনের একদম পাশের ১১তলা সুপার স্পেশালিটি ক্যানসার চিকিৎসার বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, তখনই প্রথম ফাটল নজরে আসে। বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজ। জানা যায়, যে পদ্ধতিতে এই বহুতল তৈরি উচিৎ ছিল, তা মানা হয়নি। খরচ বাঁচাতে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়র (যিনি এই ভবনের দায়িত্বে ছিলেন) তা পালন না করে অন্য পদ্ধতিতে কাজ করছিলেন। আর তাতেই এই বিপত্তি। পরে ফের ৪০ ফুট গর্ত খুঁড়ে চারিদিকে লোহার বিম বসিয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়।হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ প্রতিদিনই চলছিল। কিন্তু হঠাৎই গত বুধবার দেখা যায় হেরিটেজ ভবনের তিন এবং চারতলায় ৩০-৪০ ফুট লম্বা লম্বা ফাটল। যার গভীরতা ১/২ ইঞ্জি থেকে ২ ইঞ্জি পর্যন্ত। এরপরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের হাসপাতালে ডেকে পাঠান। তাঁরা এসে ভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে এখেন। এরপরেই কেমিক্যাল ও সিমেন্টের মিশ্রণও দিয়ে ঢেকে ফাটল বুজিয়ে দেওয়া হয়।মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলে, “আমি পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়ে কেন এমন হয়েছে তা জানতে চেয়েছি। রোগীদের নিরাপত্রা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এই বিল্ডিংয়ের বর্তমান কী পরিস্থিতি, আদৌ এই ভবন রোগীদের জন্য নিরাপদ কিনা তা জানতে চিঠি পাঠিয়েছি।”তবে এহেন ঘটনায় চরম আতঙ্কে দিন কাটছে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের। বর্ধমানে বাসিন্দা মনোয়ারা সুলতানার স্বামী এই ভবনে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, “পরশু হাসপাতালে এসে বাইরে থেকেই এই ফাটল দেখেছি। তারপর থেকে খুব চিন্তায় আছি। স্বামী খুবই অসুস্থ, হাঁটাচলা করতে পারে না। এখন কোথাও কিছু হলে কীভাবে এখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাব ভেবেই পাচ্ছি না।” এই একই ভয় গ্রাস করেছে এমসিএইচ ভবনের অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দের।