বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির আবহেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা ৷ যা আয়োজিত হবে, বাংলাদেশের জলসীমা লাগোয়া অঞ্চলেই ৷ এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে কোনও অস্থিরতা তৈরি না-হয়, তার জন্য গোপনে বাড়তি নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই মতো পুণ্যস্নান ও মেলার আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশাসনকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দিলেন তিনি ৷ এ বছর গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হবে ৮ জানুয়ারি থেকে ৷ চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৷ আর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নান হবে দু’দিন, ১৪-১৫ জানুয়ারি। সোমবার নবান্ন সভাঘরে আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক ছিল ৷ এ দিনের প্রস্তুতি সভায় গঙ্গাসাগর মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রেল, নৌসেনা ও বিএসএফের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ৷ সেখানেই পুলিশ, সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন মমতা ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কিছুটা বিপজ্জনক এলাকা রয়েছে ৷ নীরবে নজরদারি চালাতে হবে ৷ ওপারে তো আমরা যেতে পারব না ৷ তবে, সতর্ক থাকতে হবে ৷ যাতে অবাঞ্ছিত ঘটনা না-ঘটে, তা দেখতে হবে ৷ ওয়াচ টাওয়ার বাড়াতে হবে ৷” এই নজরদারির জন্য ওয়াচ টাওয়ারের পাশাপাশি, ড্রোনের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন তিনি ৷ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং ভারতীয় নৌসেনা-কেও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন মমতা ৷ সেই মতো নৌসেনার তরফে জানানো হয়েছে, মেলা চলাকালীন দু’টি হোভারক্রাফ্ট এবং তাদের একটি জাহাজের মাধ্যমে নজরদারি চলবে ভারত-বাংলাদেশ জলসীমায় ৷ তবে, মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, সম্ভব হলে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হোক ৷ যদিও, নৌসেনা জানিয়েছে তাদের কাছে এ-ধরনের কোনও ড্রোন নেই ৷ তবে, প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের তরফে তাদের ড্রোন সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি – এ বছরও মুখ্যমন্ত্রী মেলা শুরুর আগে গঙ্গাসাগরে যাবেন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ৷ ৬-৮ জানুয়ারি মমতা সেখানে উপস্থিত থাকবেন ৷ গঙ্গাসাগর মেলা ও পুণ্যস্নানে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য একাধিক বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার ৷ পরিবহণের ক্ষেত্রে ২৫০টি সরকারি বাস, ২৫০টি বেসরকারি বাস ও ৯টি বার্জ থাকছে ৷ সঙ্গে ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ ও ২১টি জেটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৷ সমস্ত জলযানে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে ৷ সেই সঙ্গে ইসরোর সাহায্য নিয়ে স্যাটালাইট ট্র্যাকিংও চলবে ৷ এ-বছরও গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়া এবং আসার জন্য সিঙ্গেল টিকিট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে ৷ প্রত্যেকটি বাসেই থাকবে সাগর বন্ধু ৷ গঙ্গাসাগরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মুড়িগঙ্গায় জল শুকিয়ে যাওয়া ৷ গতবার থেকে শিক্ষা নিয়ে মুড়িগঙ্গার নিকাশিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ ফলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, লট-এইট এবং কচুবেড়িয়ার মধ্যে প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা দেওয়া হবে ৷ একইসঙ্গে চেমাগুড়ি ও বেনুবনের মধ্যেও নিকাশি কাজ হওয়ায়, সেখানেও যাতায়াত সহজ হবে ৷ ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্যও একাধিক ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবার গঙ্গাসাগরে ৫৪ কিলোমিটারের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে ৷ এছাড়া থাকবে ১১৫০ টি সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি ৷ গঙ্গাসাগরে নজরদারির জন্য ২০টি ড্রোন থাকছে ৷ বাংলার পাশাপাশি, হিন্দিতেও মাইকিং হবে ৷ কুয়াশার কারণে যাতায়াতে অসুবিধা না-হয় সেজন্য ফগলাইটের ব্যবস্থা থাকছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কথা ভেবে প্রায় আড়াই হাজার সিভিল ডিফেন্স অন্যান্য ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে ৷ ১২টি টেম্পোরারি পাওয়ার স্টেশন এবং ৫০ টি দমকলের গাড়ি থাকছে ৷ গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন সরকারি কর্মী, পুলিশ, এনজিও, পরিবহণ কর্মী এবং মিডিয়ার জন্য ৯-১৭ জানুয়ারি মধ্যে 5 লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বীমা করেছে রাজ্য সরকার ৷ মেলা প্রাঙ্গণ যাতে পরিষ্কার রাখা যায়, তার জন্য ১২ হাজারের বেশি শৌচালয়, ৭টি সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট এবং গারবেজ কালেকশনের জন্য ৭৫টি ই-কার্ট থাকবে ৷ এছাড়া সৈকত পরিষ্কারের জন্য ৩ হাজার ভলান্টিয়ার নিযুক্ত করা হচ্ছে ৷ মেলায় আগত সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ৩৮৫টি বেডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সাগর, নামখানা, চেমাগুড়ি, লট এইট ও রুদ্রনগরে ৷ এই এলাকগুলিতে পাঁচটি অস্থায়ী হাসপাতাল করা হচ্ছে ৷ যেখানে ১৩০টি বেডের বন্দোবস্ত থাকছে ৷ এ বছরেও একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং চারটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স রাখা হচ্ছে ৷ থাকছে ১০০টি অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থাও ৷ আশঙ্কাজনক রোগীদের জন্য গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন ৷ এ দিনও গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি না-দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রের সমালোচনাও করেছেন ৷