গুলি চালিয়ে গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়ায় প্রিজন ভ্যান থেকে ফেরার সেই ‘গ্যাংস্টার’ নিকেশ এনকাউন্টারে। ঘটনাস্থল, বাংলাদেশ সীমান্ত। শনিবার সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ গোয়ালপোখরের সাহাপুর-২ নম্বর পঞ্চায়েতের ওই সীমান্ত এলাকাতেই পুলিসের বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হয় সাজ্জাক। তারপর স্থানীয় লোধন ব্লক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কিচকটোলা সেতুর কাছে এই ‘এনকাউন্টারে’র ঘটনার পরই শুরু হয়েছে চর্চা। কারণ, ডিজিপি রাজীব কুমার দু’দিন আগেই বার্তা দিয়েছিলেন, ‘দুষ্কৃতীরা যদি পুলিসকে লক্ষ্য করে দুটো গুলি চালায়, সার্ভিস রিভলভার এবং রাইফেল থেকে ছুটে যাবে চারটে গুলি।’ আর এদিন সাজ্জাকের দেহ ফুঁড়ে দিয়েছে সার্ভিস রাইফেলের তিনটি গুলি। পুলিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে পালানোর পথেই সাজ্জাককে ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। আত্মসমর্পণ করার বার্তা উপেক্ষা করে সে পুলিশের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। তখন প্রথমে ‘ওয়ার্নিং শট’ এবং পরে আত্মরক্ষার্থে আরও কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় পুলিস। তবে এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তার সহযোগী বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের নাগরিক আব্দুল হুসেন ওরফে আবালের। সাজ্জাককে এই বাংলাদেশি যেমন ইসলামপুর আদালতে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ এবং পালাতে সাহায্য করেছিল, তেমনই ফেরার থাকাকালীন আশ্রয় ও নতুন সিম কার্ডের জোগানও দিয়েছিল। কিচকটোলার পাশাপাশি স্থানীয় ঝাড়বাড়ি, বাঁশপোখরের মতো গ্রাম এবং বড়বিল্লা সীমান্ত চৌকি এলাকায় আব্দুলের খোঁজ শুরু হয়েছে।
বুধবার বিকেলে ইসলামপুর আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে চাপিয়ে রায়গঞ্জ জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল খুন-ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত সাজ্জাককে। সঙ্গে ছিল আরও দুই বন্দি। একটি নির্জন জায়গায় প্রকৃতির ডাকের বাহানা করে নামে সে। কয়েক লহমার মধ্যেই গায়ে মুড়ি দেওয়া কম্বলের ভিতর থেকে পিস্তল বের করে গুলি ছুড়ে পালায় সাজ্জাক। রক্ষীদের নজর এড়িয়ে সাজ্জাকের কাছে পিস্তল পৌঁছল কী করে? কর্তব্য গাফিলতির অভিযোগে ইসলামপুর আদালতে চার পুলিস কর্মীকে এদিন সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। রায়গঞ্জ জেল থেকেই মোবাইলে সাজ্জাক যোগাযোগ রাখছিল একদা জেলে তার সতীর্থ আবালের সঙ্গে। সেই মতো আগ্নেয়াস্ত্র এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে সে। বুধবার পালানোর পর রাত ৮টা নাগাদ সীমান্তবর্তী এক গ্রামে ফেরার গ্যাংস্টার দেখা করে আবালের সঙ্গে। সাজ্জাক সিম পাল্টালেও, আবালের ফোন ট্র্যাক করেই মেলে হদিশ। যেহেতু আবাল বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা, সেখানেই পালানোর মতলবে ছিল সাজ্জাক। বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ডিআইজি (রায়গঞ্জ) সুধীর নীলকান্তমের নেতৃত্বে থাকা বেঙ্গল এসটিএফ এবং পুলিশ জেলার এসওজি থেকে বাছাই করা ‘স্পেশালিস্ট’রা। জাভেদ শামিম কিন্তু সাফ বলেছেন, ‘ডিজি থেকে কনস্টেবল, সবাই প্রশিক্ষিত। আক্রমণ হলে, কীভাবে ট্যাকল করতে হয়, পুলিস তা জানে।’