হাওড়া বা কলকাতার মতো রেড জোনে করোনা সংক্রমণ থামাতে আরও কঠোর হতে হবে পুলিশকে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কলকাতাকে অরেঞ্জ জোনে নিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে এমনই কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কলকাতাই নয়, হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জন্যও একই ভাবে সময় বেঁধে দিলেন তিনি। এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যের সব জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন থেকে সেই বৈঠকেই জেলা ধরে ধরে পরামর্শ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে সব থেকে বেশি জোর দেন হাওড়া জেলার উপরে। বলেন, সবচেয়ে স্পর্শকাতর হয়ে রয়েছে এই জেলা। তিনি বলেন, একই অবস্থা হয়ে রয়েছে উত্তর কলকাতাও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বেশি করে রোগী আসছে হাওড়া ও উত্তর কলকাতা থেকে। এই দুই এলাকায় কঠোরভাবে লকডাউন বজায় রাখতে হবে। কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে পুলিশ বাড়ি বাড়ি খাবার পাঠিয়ে দেবে। কোনও ভাবেই সামাজিক মেলামেশা চলবে না। এসব বন্ধ করতেই হবে।’ একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোনও বাজারে ভিড় করা চলবে না। একটি দোকানে পাঁচ জনের বেশি দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। সেটা দূরত্ব বজায় রেখে। নবান্নে প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশ দিলেন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনের জন্যও।মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের উপস্থিতিতে এই বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকরা। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন হাওড়ার কথা। কলকাতা নিয়েও বিশেষ ভাবে সতর্ক করেন প্রশাসনকে। বলেন, ‘হাওড়ার পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর। কলকাতাও রেড জোনে রয়েছে। এই দুই জেলাকে রেড থেকে অরেঞ্জ জোনে আনতে হবে।’ প্রয়োজন মতো কঠোর হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে এবার রাজ্যের সীমানাগুলিতে নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এব্যাপারে রাজ্যের সীমানা লাগোয়া জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান বাংলার ১০টি জেলায় এখনও করোনা সংক্রমণ ছড়ায়নি। তাই বলে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কর্তারা যাতে আত্মসন্তুষ্টিতে না ভোগেন সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কোন ১০টি জেলা? মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান এবং বীরভূম- এই জেলাগুলিতে একজনও করোনা রোগী নেই। দিন দশেক আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছিল দেশের প্রায় ৬২ শতাংশ জেলায় কেউ করোনাভাইরাস সংক্রামিত হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়ালও বলেছিলেন, সংক্রমণ ছড়ায়নি মানে প্রশাসনিক শিথিলতার কোনও সুযোগ নেই। বরং বাড়তি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ১৯ মে পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। লকডাউনের শুরুর দিন থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৯ দিনের মেয়াদ। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে ৪৯ দিনের কথা বলেছিলেন। এদিনও সেই সময়ের কথা উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘১৯ মে পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ওইদিন ৪৯ দিন হচ্ছে। দেশের স্বার্থে, বাংলার স্বার্থে এটা আমাদের করতে হবে।’ কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ১৭০টি জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছিল দু’দিন আগে। তার মধ্যে ছিল বাংলার চারটি জেলা। সেগুলি হল কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে চলে এসেছে। অর্থাত্ গত কয়েকদিনে ওই জেলায় নতুন করে যেমন সংক্রমণ ছড়ায়নি তেমন আক্রান্ত রোগীরাও একে একে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।