প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী
কলকাতা: বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে রাজ্যে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আকাশপথে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখার পর ওই কথা বলেন তিনি। তার আগে বসিরহাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলায় ৮০ জনের মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। এই ভয়াবহ সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,এই সঙ্কটে গোটা দেশ বাংলার পাশে আছে। বাংলা যাতে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে তা আমরা দেখব। তিনি বলেন, মমতাজির নেতৃত্বে রাজ্য ভালো প্রয়াস নিয়েছে। মোদি জানান, কেন্দ্রের টিম শীঘ্রই রাজ্যে আসবে। কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত সমীক্ষা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে যারা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা, আর যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রধানমন্ত্রী এক হাজার কোটি টাকা দেবেন বলেছেন। আমরা বিশদ তথ্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেব। তবে কয়েকটা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখন কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আকাশ পথে আমি ও প্রধানমন্ত্রী দেখলাম, কোনটা জল আর কোনটা স্থল তা বোঝা যাচ্ছে না। সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মমতা জানান, দুর্গতদের জন্য রাজ্য সরকারও এক হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা চারটের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী একবার এসে দেখে যান রাজ্যে কতটা ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে। তার ঘণ্টা দুয়েক পরেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে নবান্নে খবর আসে, শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় কলকাতায় আসছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হেলিকপ্টারে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেইমতো রাতেই মোদিজিকে কোন কোন এলাকা দেখানো হবে তা চূড়ান্ত হয়। বসিরহাটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পরিকল্পনাও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের পক্ষ থেকে দুই ২৪ পরগনার কোন কোন এলাকা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে তার ম্যাপ তৈরি করা হয়। সেই ম্যাপ অনুযায়ী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর এদিন বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে কলকাতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যসচিবকে নিয়ে আকাশপথে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ এবং পরে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, বসিরহাটের ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা আকাশপথে দেখেন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী। ঘন্টাখানেক পরিদর্শনের পর বসিরহাটে একটি প্রশাসনিক বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তুলে ধরেন। ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। ওই বৈঠক শেষ করে হেলিকপ্টারে বেলা দেড়টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে ওড়িশার দিকে উড়ে যান। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দেখলাম উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কত বড় সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে আমাদের ৫৩ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে, সেই টাকা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। বিমানবন্দর থেকে নবান্নে ফিরে মুখ্যসচিব সহ উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার আকাশপথে ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।