প্রিয়াংকা সেনগুপ্ত, ঝাড়গ্রামঃ “অনেক কষ্ট করে রক্তাক্ত জঙ্গল মহলকে শান্ত করেছি। অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। ফের মাওবাদীরা মাথাচাড়া দিচ্ছে। কেউ কেউ টাকা দিয়ে তাদের সাহায্য করছে। কোনওমতেই জঙ্গলমহলকে আবার অশান্ত হতে দেব না।” জঙ্গলমহলের জেলা সফরের দ্বিতীয় দিনে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে হুঁশিয়ার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসন-পুলিশকে নির্দেশ দিলেন কারা অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে তা দেখে কড়া ব্যবস্থা নিতে। বুধবার নিজের কথা রেখে মাও হামলায় নিহত চার জনের পরিবারের সদস্যকে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন মমতা। সেইসঙ্গে আদিবাসী মাহাতো-কুরমি-লোধা-শবর জনজাতির উদ্দেশে মমতার আহ্বান, “যা বলবেন সব করে দেব। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝবেন না। মা-মাটি-মানুষের সরকারের পাশে থাকুন।” রাজ্য সরকারের পথশ্রী প্রকল্পের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পথশ্রী প্রকল্পের কাজে বাধা দেবেন না। টেন্ডার নিয়ে কোনও গন্ডগোল যেন না হয়। সব পঞ্চায়েত, সব রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বলছি। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে কেউ টাকা চাইলে সোজা থানায় যান। সরকার জনগণের। কোনও রাজনৈতিক দলের নয়।” এদিনও আদিবাসীদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প, সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাঁওতাল অ্যাকাডেমির জন্য ১ কোটি টাকা এবং তিনটি মন্দির সংস্কারের জন্য সরকারি বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন।” মুখ্যমন্ত্রী এও অভিযোগ করেন, “বাইরে থেকে লোক এসে অশান্তি পাকানোর ষড়যন্ত্র করছে। মুম্বই থেকে লোক আসছে টাকা নিয়ে। এখানকার গেস্ট হাউস গুলো ভাড়া নিচ্ছে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না?” অবৈধ বালি পাচার নিয়েও
এদিন সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রামের বনভূমি কর্মাধ্যক্ষের অভিযোগ শুনেই রণমূর্তি ধারণ করেন মমতা। পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, “বারবার কেন বলতে হয় এক কথা! কতবার বলেছি যারা এসব কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করুন। কাদের এত ইন্টারেস্ট! স্ট্রং অ্যাকশন নিন। প্রয়োজনে কয়েকজনকে অ্যারেস্ট করুন। তবে শিক্ষা পাবে। যে কেউ এসব কাজ করবে তাদের কাউকে ছাড়ব না।” এছাড়া ‘মাটি সৃষ্টি’ প্রকল্প নিয়েও কথা হয়। এই সব জেলায় যত অনুর্বর জমি রয়েছে সেগুলিকে যাতে পুনর্ব্যববহার করা যায় সেই বিষয়েই এই প্রকল্পটির ভাবনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই স্কিমটি আর একবার পৃথিবীকে পথ দেখাবে। পুজোর আগেই পুজোর উপহার পেয়ে গেল ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার পক্ষে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নিলেন।তিনি এও জানান, সবুজ সাথী প্রকল্পে এবছর আরও ১২ লক্ষ সাইকেল দেওয়া হবে। অন্য দিকে, জেলাবাসীদের তিনি সটান নিষেধ করলেন ‘তথ্যমিত্র কেন্দ্রে’ না যেতে। বরং সরকারি যে কোনও তথ্য় জানতে তাঁরা যেন ‘বাংলা সহায়ক কেন্দ্রে’ (বিএসকে) যান। তিনি অভিযোগ করলেন, তথ্যমিত্র কেন্দ্র থেকে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়। লোধাদের মধ্যে যে সামান্য কয়েকজন স্নাতক হয়েছেন, তাঁদের যাতে এই সব বিএসকে-তে যুক্ত করিয়ে দেওয়া যায়, সেই বিষয়েও নির্দেশ দিলেন তিনি। এদিন কোভিড প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরের রাজ্য থেকে আসা লরির ড্রাইভারদের খাবার নিয়ে আসতে হবে।’ যদি ধাবায় বসে খেতে হয়, সেক্ষেত্রে কোভিড বিধি মেনে সেই ধাবা পুরোপুরি স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। আর পুরো বিষয়টির ওপরে নজরে রাখতে হবে প্রশাসনকে। লরির চাকায় ছড়াচ্ছে করোনার জীবাণু বলে মনে করেন তিনি।