কলকাতা জেলা

সিআইডির নজরে শুভেন্দু! গড়ে ধ্বস নামাতেই এবার মাঠে নামছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী

শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে বাংলার রাজনীতির বেশ সরগরম। শুভেন্দু দল ছাড়লে তৃণমূলের ক্ষমতা অনেকাংশে কমবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।এর মধ্যেই সামনে এসেছে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সিআইডির তদন্ত ও পুরাতন কিছু মামলা ফের খোলার বিষয়টি। এই মধ্যেই একদিকে যেমন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের তরফে আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে তেমনি এবার শুভেন্দুর খাস তালুকে হানা দিতে পা বাড়াচ্ছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো। আগামীকাল হলদিয়ায় যেমন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বোসের নেতৃত্বে তৃণমূল যুব কংগ্রেস এক মহামিছিলেন আয়োজন করতে চলেছে তেমনি আগামী ৭ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে সভা করতে আসছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দির খাস তালুক হিসাবে হলদিয়ার যতটা পরিচিতি ঠিক ততটাই পরিচিতি মেদিনীপুর শহরেরও। রবি বিকালে হলদিয়া শহরের কদমতলা থেকে সিটি সেন্টার পর্যন্ত ওই মহামিছিল হবে। পরে হবে জনসভাও। কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে এই মিছিল ও সভার ডাক দেওয়া হলেও মূল লক্ষ্য শুভেন্দুকে ছাড়া দল কতখানি চলতে পারবে তা মেপে নেওয়া। আর তৃণমূল সুপ্রিমো মাঠে নামছেন মানেই দলের সব কিছু ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়া। অন্যদিকে আজ বিকেল নাগাদ জানা গিয়েছিল মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের ঘটনায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। কারন প্রাক্তন কিছু মাওবাদী অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের ঘটনায় তাঁদের কাছে থাকা টাকাপয়সাও তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন প্রশাসনের হাতে। সেই টাকার মোট পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সেই টাকার কোনও হদিশ না মেলায় সিআইডি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার নাম জড়িয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। কারণ সেই সময় তিনিই মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের বিষয়টু দেখতেন। এর পাশাপাশি বিশ্ববাঙ্কের ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহযোগীতায় রাজ্যের বিভিন্ন জেটিঘাট সংস্কারের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও তদন্তে নেমেছে সিআইডি। যে সময়ে ওই অনিয়ম হয়েছে তখন সেচ ও পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু। এই দুই ঘটনার পাশাপাশি সিআইডির নজর এবার পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের দিকে। অভিযোগ সেখানে হিসাবের গরমিল ধরা পড়েছে। এই বিষয়ে জেলার বেশ কিছু কো-অপারেটিভের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চলেছে সিআইডি। ঘটনাচক্রে ওই সব কো-অপারেটিভের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী যেমন জড়িত তেমনি নানা সমবায় সমিতিকে সামনে রেখেই শুভেন্দি এখন নানা কর্মসূচি নিয়ে চলেছেন। এবার এসবই চলে আসছে সিআইডির নজরে। এর থেকে চাঞ্চল্যকর বিষয় এটাই যে, বামজমানায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা নতুন করে খুলতে চলেছে রাজ্য সরকার। সব মিলিয়ে নানা মামলায় এবার নাম জড়াতে চলেছে শুভেন্দু অধিকারীর। সেক্ষেত্রে গ্রেফতারির ঘটনাও ঘটতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন এই জল্পনা ছড়িয়ে পড়ার পরেই গেরুয়া শিবিরে কার্যত ঢেউ উঠেছিল তাঁকে স্বাগত জানাবার। বিশেষ করে শুক্রবার শুভেন্দু রাজ্যের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করার পরে তা স্বাগত জানিয়েছিল বিজেপির একাধিক নেতা। তার মধ্যে মুকুল রায় যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন দিলীপ ঘোষও। ছিলেন সৌমিত্র খাঁ থেকে লকেট চ্যাটার্জিও। মুখ খুলেছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে অমিত মালব্যও। কিন্তু শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সিআইডির পদক্ষেপ ও একাধিক মামলার বিষয়টি সামনে আসতেই এই জননেতার থেকে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অনেকেই ভেবেছিলেন শনিবার হয়তো দিল্লির পথে পা বাড়াবেন শুভেন্দু। কিন্তু তা হয়নি। শেষে শনি বিকালে দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিলেন, ‘আমার যত দূর জানা আছে এখনও বিজেপির নাম উচ্চারণ করেননি উনি। এখনও টিএমসি ছাড়েননি। মন্ত্রিসভায় অদলবদল হয়, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে। যতক্ষণ না তৃণমূল ছাড়ছেন, ততক্ষণ বিজেপির ইন্টারেস্ট নেই। আগে উনি টিএমসি ছাড়ুন। বিজেপির ঝান্ডার তলায় কাজ করতে চাইলে তাঁর মতো বড় নেতাকে স্বাগত জানাব।’