জেলা

ছোট সমস্যা মেটাতে নয়া উদ্যোগ, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি নিল রাজ্য সরকার

বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে এই নয়া কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট ছোট সমস্যার ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচির মাধ্যমে সুরাহা করা হবে। ঠিক কীভাবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যেকের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, কখনও কখনও কোনও এলাকার স্কুলে ক্লাসরুমের দাবি থাকে। কিংবা এলাকায় শৌচালয়ের দাবি থাকে। আবার কোনও এলাকায় পাইপ পৌঁছলেও জলের পরিষেবা অমিল। কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাসপাতাল থাকলেও অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন বহু মানুষ। কোনও কোনও এলাকায় কালভার্ট তৈরি না হওয়ার ফলেও মানুষের মনে ক্ষোভ সঞ্চার হয়। সেই সমস্ত ছোট ছোট সমস্যার সমাধান নয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে। মূলত মিউনিসিপ্যালিটির বকেয়া কাজই ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচির মাধ্যমে করা হবে।এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই  ১০ হাজার দরখাস্ত  জমা পড়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে নয়া এই কর্মসূচি শুরু হবে। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দেড় মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ কমপক্ষে শুরু করা হবে বলেই লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যবাসী যথেষ্ট উপকৃত হবেন বলেই আশা সকলের। উল্লেখ্য, এর আগে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই ক্যাম্প থেকে স্বাস্থ্যসাথী-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান সংক্রান্ত কর্মসূচি করা হচ্ছে। সেই পরিষেবা পেয়ে যথেষ্ট খুশি সাধারণ মানুষ। ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে বিপুল সাড়া পাওয়ার পরই ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি নিল রাজ্য সরকার। এই প্রকল্প বিধানসভা নির্বাচনের ভোটবাক্সেও প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একই সঙ্গে জেলার উন্নয়নের জন্য যেমন সিউড়িতে মোরব্বা হাব করার কথা ঘোষণা করলেন তেমনি বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদকে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশও দিলেন। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন বিশ্বভারতীর সহ উপাচার্য স্বপন দত্তকে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাব নিযুক্ত করা হয়েছে ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোও তৈরি হয়ে গিয়েছে। দ্রুত এই বিশ্ববিদ্যালয়ও এবার চালু হয়ে যাবে। এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কোভিডের সংক্রমণ নিয়ে জেলাবাসীকে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রশাসনিক মহলকেও সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেন করোনা নিয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয়বার কোভিড হানা হওয়ার কথা বলছেন অনেকে। প্রশাসনের সবাই সতর্ক থাকুন। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘৪৪ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এ নথিভুক্ত করা হয়েছে পাবে। ১০ লক্ষ লোককে কার্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ৯০ হাজার কার্ড দিয়েছি ফিল্ডে।’ এরপরেও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসনের সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পৌঁছে দিতে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন। আর এই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমক খান রাজ্যের তফশালি জাতি-উপজাতি দফতরের সচিব সুব্বাইয়া। কারন মুখ্যমন্ত্রী এর আগে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক বৈঠকেই জানিয়ে দেন যে পরিবারের যে কোনও একজনের কাস্ট সার্টিফিকেট থাকলেই পরিবারের বাকিরা তা দেখিয়েই কাস্ট সার্টিফিকেট পেতে আবেদন করতে পারবে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে এই কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ শিথিলতা দেখা সম্পর্কিত দফতর। তার জেরেই এদিন ধমক খান সুব্বাইয়া। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বৈঠক থেকেই জানিয়ে দেন, যেহেতু ভোটের সময় চলে আসছে আতি আগামী ২ মাসের মধ্যেই যাবতীয় সব কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। সব দফতরের সব সচিবকদেরই তিনি এদিন কার্যত নির্দেশ দেন দ্রুত কাজ করতে। ভোট চলে এলে কাজ করা যাবে না তাই জানুয়ারির মধ্যেই সব কাজ শেষ করতে হবে বলে এদিন তিনি জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। লোগোও তৈরি হয়ে গিয়েছে। স্বপন দত্ত উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবীন্দ্রসংস্কৃতির চর্চা ও শিক্ষাপ্রদানের জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করবে বলে তিনি মুখ্যম ন্ত্রী জানিয়ে দেন। আবার এটাও জানাতে ভোলেননি যে শান্তিনিকেতনে রাস্তা সারাতে এবার উদ্যোগী হবে রাজ্য সরকার। বিশ্বভারতীর কোথায় কোথায় পাঁচিল দেওয়া হয়েছে তাও এদিন সার্ভে করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতীর দুই ক্যাম্পাসের মাঝখানে কালিসায়র থেকে উপাসনা মন্দির পর্যন্ত রাস্তা পিডব্লুডি-র থেকে নিয়েছিল বিশ্বভারতী। এদিন সেই রাস্তা ফিরিয়ে নিয়ে আবার পূর্ত দফতরের হাতেই তুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার এটাও জানান যে সিউড়িতে ভাল মোরব্বা পাওয়া যায়। তাই ওখান মোরব্বা হাব করা হবে। সেখান থেকে বিশ্ববাংলার স্টলেও মোরব্বা যাতে পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থাও করাও হবে। তিনি এও বলেন, ‘পাথর কাটার কাজে খালি জমিতে সার্ভে করে আমরা দেখব। তাহলে ১ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে। কাজটা করতে ৪-৫ বছর লাগবে। ইনিশিয়ালি কাজ শুরু হোক। পাঁচামিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে আগামী ১০০ বছরের জন্য রাজ্যে আর বিদ্যুতের অভাব হবে না। সেই ব্যবস্থা করে যাব।’ এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন বীরভূম জেলার সতীপীঠ গুলি নিয়েও প্রশাসনিক বৈঠক থেকে খোঁজখবর নেন। ফুল্লরার জন্য ১ কোটি টাকা দেওয়ার কথাও যেমন তিনি জানান তেমনি বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের জন্যও ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথাও জানান তিনি।

https://www.facebook.com/DidiKeBolo/videos/397620204838763