খেলা

দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারাল ভারত

 মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল ভারত। অজিঙ্ক রাহানের টিম জিতল আট উইকেটে। অ্যাডিলেডের ৩৬ রানের ট্রমা কাটিয়ে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ভারতের এই ঘুরে দাঁড়ানো জাতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা হয়েই থাকবে। মেলবোর্নে ভারত এর আগেও জিতেছে। ২০২০-তে অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বে ভারতের এই জয় সর্বকালের সেরার মধ্যে সূচিত হবে। কদিন আগেই যে টিমটা মাত্র ৩৬ রানে অল আউট হয়ে যায়, যে টিমের ক্যাপ্টেন ব্যক্তিগত কারণে সফরের মাঝপথে ফিরে আসেন দেশে, যে টিমের তিন সেরা প্লেয়ার চোটের জন্য টিম থেকে ছিটকে যান সেই টিমের এই জয় অসাধারণ বললেও কিছু বলা হয় না। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহম্মদ শামি এবং ইশান্ত শর্মাকে বাইরে রেখে ভারতের এই জয়, এক কথায়, ঐতিহাসিক। প্রথম ইনিংসে রাজসিক ১১২ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২৭ করার পর ম্যাচের সেরা হওয়াটা অবধারিতই ছিল অজিঙ্ক রাহানের। তবে ভারতের নবাগত ওপেনার শুভমন গিলের কথাও বলতে হবে। প্রথম ইনিংসে ৪৫ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৩৫ করলেন পঞ্জাবতনয়। তাও মাত্র ৩৬ বলে। ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে প্রাপ্তি শুভমন এবং মহম্মদ সিরাজ। তৃতীয় দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১৩৩-৬। প্রথম ইনিংসের বিচারে অজিরা এগিয়ে ছিল ২ রানে। হাতে ছিল চার উইকেট। অনেকেই আশঙ্কা করেছিল অজিদের লিড যেন কোনও মতেই ১০০-র বেশি না হয়। সেটা মাথায় ছিল রবি শাস্ত্রীর ছেলেদেরও। বেশি বাড়তে দেননি ওরা অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ইনিংসে টিম পেনরা শেষ করেছিল ১৯৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ করল ২০০ রানে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ক্যামেরন গ্রিন এবং প্যাট কামিংসের মধ্যে প্রথমে ফিরে যান কামিংসই (২২)। বুমরার বলে তাঁর ক্যাচ ধরেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। মিচেল স্টার্ককে নিয়ে রান বাড়ানোর কাজটা করতে থাকেন গ্রিন। কিন্তু দলের ১৭৭ রানের মাথায় তাঁকে ফেরান মহম্মদ সিরাজ। ক্যাচটা ধরেন রবীন্দ্র জাডেজা। ১৪৬ বল খেলা গ্রিনের ৪৫ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি বাউন্ডারি। অজি ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ। গ্রিন আউট হয়ে যাওয়ার পর আর খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। নাথান লায়ন (৩) এবং জস হ্যাজেলউড (১০) খুব তাড়াতাড়িই ফিরে যান। লায়ন উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন সিরাজের বলে। আর হ্যাজেলউডকে বোল্ড করেন অশ্বিন। স্টার্ক ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মহম্মদ সিরাজ। জীবনের প্রথম টেস্টে পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট (২-৪০) নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি তিন উইকেট (৩-৩৭)। দ্বিতীয় ইনিংসের বাকি উইকেটগুলি পেয়েছেন যশপ্রীত বুমরা (২-৫৪), উমেশ যাদব (১-৫), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (২-৭১) এবং রবীন্দ্র জাডেজা (২-২৭)। জেতার জন্য ভারতের দরকার ছিল ৭০ রান। মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৫) এবং চেতেশ্বর পুজারাকে (৩) হারিয়ে ভারত সেই রান তুলে নেয়। শুভমন ৩৫ রানে (সাতটি বাউন্ডারি) এবং অজিঙ্ক ২৭ রানে (৪০ বলে, তিনটি বাউন্ডারি) করে ম্যাচ জিতে যান। সিরিজ এখন ১-১। আরও দুটি টেস্ট বাকি। ৭ জানু্যারি থেকে শুরু হওয়ার কথা সিডনি টেস্ট। কিন্তু সে শহরে আবার করোনার প্রকোপ বেড়েছে। তাই সেই টেস্ট সরে আসতে পারে মেলবোর্নে। সে যাই হোক, বাকি দুটো টেস্টে ভারতই এগিয়ে থেকে শুরু করবে। তৃতীয় টেস্টে দলে আসার কথা রোহিত শর্মার। তার মানে ভারতের ব্যাটিং শক্তি বাড়বে। তবে অজিঙ্ক রাহানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির কথা মাথায় রেখেও বলা যায় ভারতকে জিতিয়েছে পাঁচ বোলার। এই পঞ্চপাণ্ডবের জন্যই অজিরা প্রথম ইনিংসে ১৯৫ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে মাত্র ২০০। এবং পাঁচ বোলারের মধ্যে জাডেজার কথা আরও বিশেষ করে বলতে হবে। প্রথম ইনিংসে তাঁর ৫৭ রান ভারতকে ৩২৬ করতে সাহায্য করেছে। ভারতের এখন যা অবস্থা তাতে তাদের পক্ষে সিরিজ জয়ই স্বাভাবিক। ৩৬ রানের ট্রমা কাটিয়ে সাড়ে তিন দিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারানোর পর ভারতের পক্ষে সিরিজ হারা উচিত নয়।